মহাত্মা গান্ধীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম নামঃ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ।
ভারতে পরিচিতঃ জাতির জনক নামে
বাবার নামঃ করমচাঁদ গান্ধী ,
মায়ের নামঃ পুতলী বাই
দাম্পত্য সঙ্গীঃ কস্তুরবা গান্ধী ( বি. ১৮৮৩; মৃ. ১৯৪৪)ডিগ্রীঃ ইউনিভার্সিটি কলেজ , লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার
বই লিখেছেনঃ মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ
মৃত্যুঃ ৩০শে জানুয়ারী ১৯৪৮
৮ই আগস্ট ১৯৪২ সালে দেওয়া গান্ধীজীর বিখ্যাত ভাষণ
আপনারা বিষয়টি আলোচনা করার আগে , আপনাদের সামনে আমাকে দু-একটা ব্যাপার বলতে দিন, আমি আপনাদের দুটো বিষয় আপনারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগে, আপনাদের সামনে | পরিষ্কার করে বোঝাতে চাই এবং এগুলো একই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করুন যেভাবে এগুলো আমি আপনাদের সামনে রাখব। এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আপনারা বিচার করুন, কেননা যদি আপনারা এটায় সম্মতি দেন, তাহলে আমি কী বলছি সেটা বুঝতে পারবেন। এটা হবে এক মহৎ দায়িত্ব। অনেকেই আমায় জিজ্ঞেস করে যে আমি কি সেই একই ব্যক্তি যেমনটা ১৯২০ সালে ছিলাম, কিংবা আমার মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? আমাকে এই প্রশ্ন করার অধিকার আছে আপনাদের ।
আমাকে এটা নিশ্চিত করতে দিন যে আমি সেই একই গান্ধী আছি যেমনটা ছিলাম ১৯২০ সালে। আমার মধ্যে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। অহিংসায় আমি এখনও সমান গুরুত্ব দিই যা আমি তখনও দিতাম । তবে এখন এবিষয়ে আমার ব্যাখ্যা আরও শক্তিশালী হয়েছে। বর্তমানের প্রতিজ্ঞা ও আমার অতীতের লেখাপত্র ও আন্দোলনের মধ্যে সত্যিকারের কোনো বৈপরীত্য নেই।
বর্তমানের মতো পরিস্থিতি সবার জীবনে ঘটে না এবং কারও জীবনে ঘটলে তা খুবই বিরল। আমি আপনাদের জানাতে চাই এবং আপনারা অনুভব করুন যে আজ বিশুদ্ধ অহিংসা ছাড়া আমি আর কিছুই বলছি বা করছি না। ওয়ার্কিং কমিটির খসড়া অহিংসার ওপর ভিত্তি করে গঠিত, একইভাবে সংশ্লিষ্ট সংগ্রামের শিকড়ও অহিংসায় প্রোথিত। সেজন্য যদি আপনাদের মধ্যে কেউ অহিংসায় আস্থা হারান বা এনিয়ে দোলাচলে ভুগছেন, তাহলে তাঁকে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হবে না। আমাকে নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে দিন। ঈশ্বর আমায় অহিংসা অস্ত্রের দ্বারা এক মহামূল্যবান উপহার দিয়েছেন। আমি এবং আমাদের অহিংসা আজ পরীক্ষার সামনে। বর্তমান সংকটে, যখন পৃথিবী হিংসার আগুনে দগ্ধ এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, আমি ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা প্রয়োগে ব্যর্থ, ঈশ্বর আমায় ক্ষমা করবেন না এবং আমাকে এই মহান উপহারের ক্ষেত্রে ভুল বিচার করা হবে। আমায় এখনই কিছু করতে হবে। আমি দ্বিধা করব না এবং প্রায় দেখিইনি, যখন রাশিয়া ও চীন হুমকি দিয়েছিল।
আমাদের এটা ক্ষমতার জন্য অভিযান নয়, বরং ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিশুদ্ধ অহিংসা সংগ্রাম। হিংস্র সংগ্রামে একজন সফল জেনারেলকে সাধারণত জানা যায় যে সামরিক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু কংগ্রেসের পরিকল্পনা, অবশ্যই অহিংস থাকবে, এখানে স্বৈরতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। একজন অহিংস স্বাধীনতার সেনানী নিজের জন্য কিছুই চায় না, সে শুধু তার দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জনের পর কে শাসন করবে সেবিষয়ে কংগ্রেস শঙ্কিত নয় । ক্ষমতা যখনই আসুক সেটা ভারতের জনগণের হবে, এবং তারা কার ওপর বিশ্বাস রাখবে এটা ঠিক করবে ভারতের মানুষই। হয়তো শাসনভার অর্পণ করা হতে পারে পার্সিদের হাতে, এটা ঘটলে আমার ভাল লাগবে অথবা তারা এটা অন্য কারও হাতে তুলে দিতে পারে যাদের নাম আজ কংগ্রেসে শোনা যায় না। তখন এটা আপনাদের বলা সঠিক হবে না, ‘এই সম্প্রদায় একেবারে ক্ষুদ্র। এই সম্প্রদায় স্বাধীনতা সংগ্রামে যথেষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেনি, তাদের হাতে আমরা কেন সব ক্ষমতা তুলে দেব?” সৃষ্টি থেকেই কোনোরকম সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে একেবারে মুক্ত কংগ্রেস। এটা সর্বদা গোটা দেশের কথা ভেবেছে এবং সেভাবেই কাজ করছে...
আমি জানি আমাদের অহিংসা কত নিখুঁত এবং আমরা আদর্শ থেকে কতটা দূরে রয়েছি, কিন্তু অহিংসায় কোনো চূড়ান্ত ব্যর্থতা বা পরাজয় নেই। আমার আস্থা আছে, সেজন্য যদি আমাদের দুর্বলতা সত্ত্বেও, বড় কিছু ঘটবেই, এটা ঘটবে কেননা ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করতে চাইছেন আমাদের নীরবতায় জয়ী হওয়ার জন্য। গত বাইশ বছর ধরে আমরা যে সাধনা করেছি এটা তারই পুরস্কার ।
আমি পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বাস করি, স্বাধীনতার জন্য আমাদের মতো এত সঠিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কেউ করেনি। জেলে থাকাকালীন আমি কার্লাইলের ফরাসি প্রস্তাব পড়েছি, এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু আমায় রুশ প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছেন। কিন্তু এটা আমার ধারণা যে এই সব সংগ্রাম করা হয়েছিল অস্ত্রের দ্বারা হিংস্রতার সঙ্গে এবং সেজন্য তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপলব্ধিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমার মানসপটে যে গণতন্ত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে অহিংসা দ্বারা, সবার জন্য থাকবে সমান স্বাধীনতা। সবাই তার নিজের প্রভু হবে। আজ আপনাদের আমি এরকম গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে যোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। স্বাধীনতার জন্য সাধারণ আন্দোলনে যোগ দিলেই আমরা হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিভেদ ভুলে যাব, তখন শুধু নিজেকে ভারতীয় হিসেবেই ভাবব।
তারপর, ব্রিটিশদের প্রতি আপনাদের আচরণ সম্পর্কে একটা প্রশ্ন আছে। আমি এটা লক্ষ্য করেছি যে ব্রিটিশদের প্রতি সর্বস্তরে জনগণের একটা দৃশী আছে। মানুষ বলছে ব্রিটিশদের ব্যবহারে তারা চরম বিরক্ত ও হতাশ। ব্রিটিশ শাসন ও ব্রিটিশ জনগণের মধ্যে মানুষ কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের কাছে এই দুটো সমান ঘৃণ্য এবং এরা জাপানিদের স্বাগতম জানাতে পারে। এটা সবচেয়ে বিপজ্জনক। তার অর্থ ওরা এক হাত থেকে দাসত্ব অন্য হস্তে অর্পণ করবে। আমাদের অবশ্যই এটা উপলব্ধি করতে হবে। ব্রিটিশ জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই, আমরা তাদের শাসনের বিরুদ্ধে লড়ছি। ব্রিটিশ শাসন প্রত্যাহার করার প্রস্তাব ক্রোধ থেকে আসেনি। এটা এসেছে কেননা বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে ভারত তার নিজের ভূমিকা নিতে সক্ষম বলে। ভারতের মতো বিশাল দেশের পক্ষে এটা মোটেও সুখের পরিস্থিতি নয় যে ভারতকে শুধু অর্থ ও সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করা হবে এবং রাষ্ট্রসংঘ যুদ্ধ পরিচালনা করবে। যতদিন পর্যন্তনা আমরা স্বাধীন হচ্ছি আমরা কিছুতেই সত্যিকারের ত্যাগ ও উৎসর্গের মূল্য বুঝতে পারব না। আমরা যখন যথেষ্ট পরিমাণে আত্মত্যাগ করব ব্রিটিশ সরকার আমাদের থেকে স্বাধীনতা করায়ত্ত করতে সক্ষম হবে না । সুতরাং আমাদের উচিত ঘৃণিত হওয়ার থেকে বেরিয়ে আসা। নিজের কথা বলতে পারি, আমি কখনও ঘৃণিত হয়েছি উপলব্ধি করিনি। প্রকৃতপক্ষে আমি নিজেকে আগের তুলনায় এখন বেশি ব্রিটিশের মহৎ বন্ধু বলে মনে করি। তার একটা কারণ বর্তমানে ওরা বিপর্যস্ত। আমাদের বন্ধুত্ব সেজন্য, আমার উচিত ওদের ভুল থেকে ওদের রক্ষা করা। পরিস্থিতি যা দেখতে পাচ্ছি তাতে ওরা বিপর্যয়ের সামনে এসে পড়েছে।
এটা, সেজন্য, আমার কর্তব্য যে ওদের বিপদ সম্পর্কে ওদের সচেতন করা যদিও বর্তমানে ওদের দিকে আমাদের বন্ধুত্বের হাত সরিয়ে নেওয়ার কাজটা চলতে থাকবে। মানুষ হয়তো হাসতে পারে, কিন্তু এটাই আমার দাবি। এমন একটা সময়ে যখন আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করছি, আমি কাউকে ঘৃণা করতে চাই না।
মহাত্মা গান্ধীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী
০ সর্বদা চিন্তা, কথা ও কর্মে সম্পূর্ণ সম্প্রীতির লক্ষ্য থাকা উচিত । সর্বদা তোমার চিন্তা বিশুদ্ধ করার এবং সবকিছু ভাল করার লক্ষ্য থাকুক
০ যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি যেকোনো কিছু থেকে তোমার অন্তরের সাহায্য ও স্বস্তি পাচ্ছ সেটা বজায় রাখো।
০ পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে ভালবাস |
০ সত্যের ব্যবধান কখনও প্রগতির স্বাস্থ্যকর সংকেত।
০ সৎঅসম্মতি কখনও প্রগতির শুভ লক্ষণ ৷
০ সাংবাদিকও ফোটোগ্রাফার ছাড়া, আমি সবার জন্য সাম্যে বিশ্বাস করি ।
No comments: