শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের অমৃত বাণী
● যত মত তত পথ। আপনার মতে নিষ্ঠা রাখিও, কিন্তু অপরের মতের দ্বেষ বা নিন্দা করিও না।
●বিদ্যারূপিণী স্ত্রী যথার্থ সহধর্মিণী। স্বামীকে ঈশ্বরের পথে যেতে বিশেষ সহায়তা করে। দু’–একটি ছেলের পর দুজনে ভাই-ভগিনীর মত থাকে! দুজনেই ঈশ্বরের ভক্ত—দাস ও দাসী। তাদের সংসার, বিদ্যার সংসার। ঈশ্বরই একমাত্র আপনার লোক—অনন্তকালের আপনার। সুখে-দুঃখে তাঁকে ভুলে না—যেমন পাণ্ডবেরা।
● চিল শকুনি খুব উঁচুতে উঠে, কিন্তু ভাগাড়ের দিকে কেবল নজর। পণ্ডিত অনেক বই শাস্ত্র পড়েছে, শোলোক ঝাড়তে পারে, কি বই লিখেছে, কিন্তু মেয়ে মানুষে আসক্ত, টাকা মান সারবস্তু মনে করেছে; সে আবার পণ্ডিত কি? ঈশ্বরে মন না থাকলে পণ্ডিত কি?
● তিন টান হলে তবে তিনি দেখা দেন—বিষয়ীর বিষয়ের উপর, মায়ের সন্তানের উপর, আর সতীর পতির উপর টান। এই তিন টান যদি কারও একসঙ্গে হয় সেই টানের জোরে ঈশ্বরকে লাভ করতে পারে। —শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, প্রথম ভাগ।
● একা খেতে গাঁজাখোরের সুখ হয় না, ভক্তও গাঁজাখোরের ন্যায়, একা মা'র নাম করতে তার মনে আনন্দ হয় না।
● যাবৎ বাঁচি তাবৎ শিখি।
● যেমন আলু ইত্যাদি সিদ্ধ হইলে কোমল হয় তদ্রূপ সিদ্ধ মন কোমল হইয়া থাকে।
●নিলিপ্ত সংসারী রাজার বাড়ির দাসীর ন্যায়। রাজবাড়ীর দাসী রাজার ছেলেমেয়েদের আদর যত্ন করে। তাহাদিগকে প্রতিপালন করে, তাহাদের সেবা করে, কিন্তু জানে যে সেই ছেলেমেয়ে তার নয়, রাজার।
● হৃদয় সরোবর যখন কামনাবায়ুতে চঞ্চল থাকে, তখন ঈশ্বরচন্দ্র দর্শন অসম্ভব।
●যেমন কৃপণের ধনে মন, তেমন তাঁতে মন চাই।
●যে ব্যক্তি পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে বৈরাগী হয়ে বাহির হয়ে যায়, এরূপ ব্যক্তিকে বিরক্ত বৈরাগী বলে। সে দুই দিনের বৈরাগী, পশ্চিমে চাকুরি জুটিলে তাহার আর বৈরাগ্য থাকে না।
● ঈশ্বরের এক দিক যাহারা দেখিয়াছে, তাহারা পরস্পর ঝগড়া করে।
●পাঁকাল মাছ পাঁকে থাকে বটে, কিন্তু পাঁক তার গায়ে লাগে না। মুক্ত পুরুষেরাও সেই রকম।
● কেউ দুধ শুনেছে, কেউ দুধ দেখেছে, কেউ দুধ খেয়েছে। যে কেবল শুনেছে সে অজ্ঞান, যে দেখেছে সে জ্ঞানী, যে খেয়েছে তারই বিজ্ঞান অর্থাৎ বিশেষ রূপে জানা হয়েছে। ঈশ্বর দর্শন করে তাঁর সহিত আলাপ যেন তিনি পরমাত্মীয়, এরই নাম বিজ্ঞান ।
● প্রেমের দুটি লক্ষণ। প্রথম—জগতে ভুল হয়ে যাবে। এত ঈশ্বরে ভালোবাসা যে বাহ্যশূন্য। চৈতন্যদেব বন দেখে বৃন্দাবন ভাবে, সমুদ্র দেখে যমুনা দেখে শ্রীযমুনা ভাবে। দ্বিতীয় লক্ষণ—নিজের দেহ যে এত প্রিয় জিনিস, এর উপরও মমতা থাকবে না। দেহাত্মবোধ একেবারে চলে যাবে।
● সংসার মদে মত্ত জীবের নেশা কাটাবার একমাত্র উপায় সাধুসঙ্গ।
● যেমন ‘জল’ ‘ওয়াটার’ ‘পানি’। এক পুকুরে তিন-চার ঘাট; এক ঘাটে হিন্দুরা জল খায়, তারা বলে ‘জল'। একঘাটে মুসলমানেরা জল খায়, তারা বলে ‘পানি’। আর এক ঘাটে ইংরাজরা জল খায়, তারা বলে ‘ওয়াটার’। তিন-ই এক কেবল নামে তফাৎ! তাকে কেউ বলছে ‘আল্লা’; কেউ বলছে ‘গড্’; কেউ বলছে ‘ব্ৰহ্ম’, কেউ রাম, হরি, যীশু, দুর্গা।
● বিষয়াসক্ত মন ভিজে দেশলাই।
● বিশ্বাস হয়ে গেলেই হল। বিশ্বাসের চেয়ে আর জিনিস নাই কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ হলে ভাব ভক্তি প্রেম এই সব হয়। এরই নাম ভক্তিযোগ। ভক্তিযোগই যুগধর্ম
● জ্ঞান ও প্রেম সমেত আত্মাকে ব্রহ্মে সমর্পণ করার সাধনাই ব্রহ্মধর্মের সাধনা ।
● যেমন ভাব তেমনি লাভ।
● মেয়েরা এক একটা শক্তির রূপ। পশ্চিমে বিবাহের সময় বরের হাতে ছুরি থাকে, বাঙলাদেশে জাতি থাকে—অর্থাৎ শক্তিরূপা কন্যার সাহায্যে বর মায়াপাশ ছেদ করবে।
● যিনি জগতের মা, তিনিই এই মায়ার রূপ—স্ত্রীলোকের রূপ ধরেছেন। এটি ঠিক জানলে আর মায়ার সংসার করতে ইচ্ছা করে না। ঈশ্বর দর্শন না হলে স্ত্রীলোক কী বস্তু বোঝা যায় না । সংসারী জীব হল গুটিপোকা। মন করলে কেটে বেরিয়ে আসতে পারে; কিন্তু নিজের ঘর বানিয়েছে, ছেড়ে আসতে মায়া হয়।
● নিষ্ঠার পর ভক্তি। ভক্তি পাকিলে ভাব হয়। ভাব ঘনীভূত হলে মহাভাব। সর্বশেষে প্রেম।
● যিনি ব্রহ্ম তিনিই আদ্যাশক্তি। যখন নিষ্ক্রিয় তখন তাঁকে ব্রহ্ম বলি। পুরুষ বলি। যখন সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় এইসব করেন তাঁকে শক্তি বলি, প্রকৃতি বলি। পুরুষ আর প্রকৃতি। যিনি পুরুষ তিনিই প্রকৃতি। আনন্দময় আর আনন্দময়ী।
● ‘হে ঈশ্বর, আর অমন করব না'—বলে যদি কেউ অনুতাপে কাঁদে তা হলে ময়লাটা ধুয়ে যায়। তখন ঈশ্বররূপ চুম্বক পাথর মনরূপ সূচকে টেনে লন।
● সাত ভূমি মনের স্থান। যখন সংসারে মন থাকে তখন লিঙ্গ, গুহ্য, নাভি মনের বাসস্থান। মনের তখন ঊর্ধ্বদৃষ্টি থাকে না—কেবল কামিনী-কাঞ্চনে মন থাকে। মনের চতুর্থ ভূমি হৃদয়। তখন প্রথম চৈতন্য হয়েছে। আর চারদিকে জ্যোতিঃদর্শন হয়। মনের পঞ্চম ভূমি কণ্ঠ। মন যার কণ্ঠে উঠেছে তার অবিদ্যা, অজ্ঞান সব গিয়ে ঈশ্বরের কথা বই অন্য কোনো কথা শুনতে বা বলতে ভালো লাগে না। মনের ষষ্ঠ ভূমি কপাল—মন সেখানে গেলে অহর্নিশি ঈশ্বরীয় রূপ দর্শন হয়। শিরোদেশ সপ্তম ভূমি—সেখানে মন গেলে সমাধি হয় ও ব্রহ্মজ্ঞানীর প্রত্যক্ষ দর্শন হয়। কিন্তু সে অবস্থায় শরীর অধিক দিন থাকে না।
● সকল লোকের শক্তি কি সমান হতে পারে? বিভুরূপে সর্বভূতে এক হয়ে আছেন বটে। কিন্তু শক্তি বিশেষ ।
● মন যোগীর বশ। যোগী মনের বশ নয়।
●অহং আর মমতা। যশোদা ভাবতেন, আমি না দেখলে গোপালকে কে দেখবে, তাহলে গোপালের অসুখ করবে। কৃষ্ণকে ভগবান বলে যশোদার বোধ ছিল না। আমার মমতা—আমার জ্ঞান, আমার গোপাল!
● কচ্ছপের মতো সংসারে থাক। কচ্ছপ নিজে জলে চরে বেড়ায়—কিন্তু ডিম আড়াতে রাখে। সব মনটা তার ডিম যেখানে সেখানে পড়ে থাকে।
●কথায় বলে হনুমানের 'রাম' নামে এত বিশ্বাস যে বিশ্বাসের গুনে সাগর লঙ্ঘন করলে। কিন্তু স্বয়ং রামের সাগর বাঁধতে হল। সংসারী ফোঁস করবে। বিষ ঢালা উচিত নয়। কাজে কারু অনিষ্ট যেন না হয়; কিন্তু শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ক্রোধের আকার দেখাতে হয়, না হলে শত্রুরা এসে অনিষ্ট করবে।
● এই জগতে বিদ্যা মায়া অবিদ্যা মায়া দুই আছে, জ্ঞান ভক্তি আছে আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে, সত্ত আছে অসৎও আছে। ভালোও আছে মন্দও আছে। কিন্তু ব্ৰহ্ম নির্লিপ্ত, ভালোমন্দ জীবের পক্ষে, সৎ অসৎ জীবের পক্ষে, তাঁর ওতে কিছু হয় না। যেমন প্রদীপের সম্মুখে কেউ ভাগবত পড়ছে, আর কেউ বা জাল করছে। প্রদীপ নির্লিপ্ত। রাজযোগে মনের দ্বারা যোগ হয়—ভক্তির দ্বারা, বিচারের দ্বারা যোগ হয়।
● মিথ্যাকে মিথ্যা দ্বারা বধ করা সেটাও মিথ্যা।
● সংসার লাল চুসিমের মতো। লাল চুসিম কঠিন কাষ্ঠখণ্ড, তাহাতে কোনো রস নাই, কিন্তু শিশু রাঙা দেখিয়া আনন্দে তাহা চুসিতে থাকে, মা সময়ে, সময়ে আসিয়া তাহাকে দুধ খাওয়াইয়া যান। সেইরূপ অজ্ঞান লোকের বাহ্য চাকচিক্যশালী নীরস সংসারে ভুলিয়া থাকে। পরম মাতার প্রেমদুগ্ধ ভিন্ন সংসারে তাহার আত্মার ক্ষুধানিবৃত্তি হয় না।
●লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, তিন থাকতে নয়।
●তুমি জীবনে যে কাজই করো না কেন, নিজের মনকে সর্বদা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত রেখো, তাহলে মনের মধ্যে শান্তি পাবে, সাহস পাবে।
●ঈশ্বরকে ধরে সকল কাজ করো নিরাপদে থাকবে।
●যারা কেবল কামিনী-কাঞ্চন নিয়ে আছে—ঈশ্বরকে একবারও ভাবে না, তারা বদ্ধজীব ।
●প্রেম রজ্জুর স্বরূপ। প্রেম হলে ভক্তের কাছে ঈশ্বর বাঁধা পড়েন আর পালাতে পারেন না।
●নির্মল স্রোতজলে ঘড়া বা কলসি ডুবাইবার সময় বগ্গ্ করিয়া কতই না শব্দ হয়, যতক্ষণ না কলসি পূর্ণ হয় ততক্ষণ শব্দ থাকে, জলপূর্ণ হইলে আর শব্দ হয় না; নিঃশব্দ ও পূর্ণকলসি গভীর জলে শান্ত হইয়া অবস্থান করে। সাধকও সেইরূপ।
●রাত্রে আকাশে কত তারা দেখ, সূর্য উঠলে দেখতে পাও না বলে কি বলবে দিনের বেলায় আকাশে তারা নেই? সেইরকম অজ্ঞান অবস্থায় ঈশ্বরকে দেখতে পাও না বলে কি বলবে ঈশ্বর নেই? আমি কি হাড়, না মাংস, না রক্ত, না নাড়িভুঁড়ি? আমি খুঁজতে খুঁজতে ‘তুমি’ এসে পড়ে, অর্থাৎ অন্তরে সেই ঈশ্বরের শক্তি বই আর কিছুই নাই, আমি নাই—তিনি।
● বিষয় বুদ্ধি ত্যাগ না করলে চেতনা হয় না—ভগবান লাভ হয় না। বিষয়বুদ্ধি থাকলেই কপটতা হয়।
●পঞ্চভূতের ফাঁদে ব্রহ্ম পড়ে কাঁদে .
●মনটি দুধের মতো। সেই মনকে যদি সংসার জলে রাখ, তাহলে দুধে-জলে মিশে যাবে। তাই দুধকে নির্জনে দই পেতে মাখন তুলতে হয়। যখন নির্জনে সাধন করে মনরূপ দুধ থেকে জ্ঞানভক্তি রূপ মাখন তোলা হল তখন সেই মাখন অনায়াসে সংসার জলে ফেলে রাখা যায়। সে মাখন কখনও সংসার জলের সঙ্গে মিশে যাবে না—জলের ওপর নির্লিপ্ত হয়ে ভাসবে।
●পরমহংস কাকে বলি? যিনি হাঁসের মতো দুধে-জলে এক সঙ্গে থাকলেও জলটি ছেড়ে দুধটি নিতে পারেন। পিঁপড়ের ন্যায় বালিতে চিনিতে একসঙ্গে থাকলেও বালি ছেড়ে চিনিটুকু গ্রহণ করতে পারেন । মন যখন লীন হয়ে যায় মনের নাশ হয়। মহাকরণে নাশ হয়। মনের নাশ হলে আর খবর নাই। এইটি চৈতন্যদেবের অন্তর্দশা। ঈশ্বর এক কিন্তু তাঁর ভাব বিভিন্ন। যেমন বাটির কর্তা এক ব্যক্তি কিন্তু তিনি কাহারো পিতা, কাহারো ভ্রাতা এবং কাহারো পতি। ভাব ভিন্ন ভিন্ন, ব্যক্তি এক। ঈশ্বর সেই রকম ।
● ফল বড় হলে ফুল আপনি উড়ে যায়। দেবত্বের প্রভাব বাড়িলে নরত্ব থাকে না।
● পতঙ্গ একবার আলো দেখলে আর অন্ধকারে যায় না। পিঁপড়া গুড়ে প্রাণ দেয় তবু
ফেরে না। ভক্ত এরূপ।
● বালকের ন্যায় সাধকের রোদন বল।
● জ্ঞান-পুরুষ। ভক্তি স্ত্রীলোক। ঈশ্বরের বাহির বাটিতে জ্ঞান যেতে পারে, কিন্তু অন্তঃপুরে ভক্তি ছাড়া আর কেউ যেতে পারে না।
● পার্থিব লাভের আশায় সংসারীরা অনেক রকম ধর্মকর্ম করে থাকে, কিন্তু বিপদ, দুঃখ ... দারিদ্র্য ও মৃত্যু আসলে তারা সব ভুলে যায়। পাখি সমস্ত দিন “রাধাকৃষ্ণ” বলে, কিন্তু বেড়াল ধ’রলে কৃষ্ণনাম ভুলে ক্যাঁ ক্যাঁ ক'রতে থাকে।
● ঈশ্বরের এক দিক যাহারা দেখিয়াছে, তাহারা পরস্পর ঝগড়া করে।
● যারা হীনবুদ্ধি, তারাই সিদ্ধাই চায় ।
● যে লোক বড় মানুষের কাছে কিছু চেয়ে ফেলে, সে আর খাতির পায় না! সে লোককে এক গাড়িতে চড়তে দেয় না; আর যদি চড়তে দেয় তো কাছে বসতে দেয় না,— তাই নিষ্কাম ভক্তি, অহেতুকা ভক্তি—সর্বাপেক্ষা ভাল।
● বাজিকর আর বাজিকরের খেলা। বাজিকরই সত্য। তাঁর খেলা সব অনিত্য—স্বপ্নের মত।
● সরল হলে ঈশ্বরকে সহজে পাওয়া যায়। সরল হলে উপদেশে শীঘ্র কাজ হয়। পাট করা জমি, কাঁকর কিছু নাই, বীজ পড়লেই গাছ হয় আর শীঘ্র ফল হয়।
কি পড়লেন ? শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের বাণী । শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের উক্তি । অমৃতকথা । Quotes by Sri Sri Ramakrishna in Bengali . Ramakrishna Status
darun
ReplyDeletethe gret
ReplyDelete