বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের শাশ্বতকথা •
অত্যাচারী : শোন্ অত্যাচারী ; শোন্ রে সঞ্চয়ী! ছিনু সর্বহারা, হব সর্বজয়ী।
🔹শুধু চরকা খদ্দর সম্বল করে দেশ যে কতকাল কোন সুদূর ভবিষ্যতের দিকে স্বরাজের আশায় পথ চেয়ে থাকবে তা বুঝতে পারি না।
🔹প্রার্থনা করো—যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ।
🔹মহাবিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশ- বাতাসে ধ্বনিবে না অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীমরণভূমে রণিবে না।
🔹আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস্, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ।
🔹ক্ষুধা তৃষ্ণা আছে, আছে মোর প্রাণ, আমি মানুষ, আমি মহান্
🔹আত্মার তৃপ্তিই স্বর্গসুখ আর আত্মপ্রবঞ্চনার পীড়াই নরক যন্ত্রণা।
ধর্ম ও ইসলাম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
ইসলাম : আমার ক্ষুধার অন্নে তোমার অধিকার না থাকতে পারে, কিন্তু আমার উদ্বৃত্ত অর্থে তোমার নিশ্চয় দাবী আছে—এ শিক্ষাই ইসলামের
🔹স্পষ্ট কথা বলার একটা অবিনয় থাকে, কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়াটা দুর্বলতা।
🔹কবি সবার কথা কইলে, এবার নিজের কথা কহ। তোমার হাসিতে যে বাঁশী বাজে সে তো তুমি নহ।
🔹মানুষ অন্নের জন্য ক্ষুধা অনুভব করে, তেমনি করে সৌন্দর্য-পিপাসাকে অনুভব। মানুষের এই সৌন্দর্য-ক্ষুধা থেকেই কাব্যের সৃষ্টি।
🔹
গান ফুরালে যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে।
🔹
ত্যাগ ও ভোগ : দুয়েরই প্রয়োজন আছে জীবনে। যে ভোগের স্বাদ পেল না, তার ত্যাগের সাধ জাগে না। ক্ষুধিত উপবাসী জনগণের মধ্যে এই সেনাপতি, অগ্রনায়ক আগে প্রবল ভোগের তৃষ্ণা জাগান। অবিশ্বাসী, নিদ্রাতুর জনগণের বুকে রাজসিক শক্তি জাগিয়ে তাদের তামসিক জড়তা নৈরাশ্যকে দূর করেন। রাজসিক শক্তিকে একমাত্র সাত্ত্বিকী শক্তি নিয়ন্ত্রিত করতে পারে।
🔹
তুমি দুখের বেশে এলে বলে ভয় করি কি হরি
দাও ব্যথা যতই, তোমায় ততই নিবিড় করে ধরি।
🔹
🔹মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙ্গে ফেল ও শিকল! যে ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ।
🔹নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
🔹জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্যলক্ষ্মী নারী, সুষমা লক্ষ্মী, নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী।
🔹জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান, মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
🔹বিশ্বে যা কিছু মহান্ সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
🔹অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়।
🔹কল্যাণী নারীই বিশ্বের প্রাণ। এ নারী হিম হয়ে গেলে বিশ্বপ্রাণের স্পন্দনও এক মুহূর্তে থেমে যাবে।
🔹যে পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ ছাড়া আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়।
🔹অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজের পাপ গোনো।
🔹পাপ করিয়াছে বলিয়া কি নাই পুণ্যের অধিকার ?
ধর্ম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
পীড়নঃ যুগের ধর্ম এই পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।
🔹শোন মর্তের জীব, অন্যের যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব ।
🔹বড় : আমরা বড় কাউকে যখন হারাই, তখন তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করি—তাঁর সৃষ্টিকে, তাঁর সাধনাকে শ্রদ্ধা করি, তাঁকে বাঁচিয়ে রেখে। যে বিরাট আত্মার নৈকট্য থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি, তার দুঃখ বহু পরিমাণে ভুলতে পারব, যদি তাঁরই অসমাপ্ত সাধনাকে আমাদের সাধনা বলে গ্রহণ করতে পারি।
বিদ্রোহ : বিদ্রোহ মানে কাউকে না মানা নয়, বিদ্রোহ মানে যেটা বুঝি না সেটাকে মাথা উঁচু করে “বুঝি না” বলা।
🔹অন্যায় করলে, পাপ করলে অন্তরে যে পীড়া উপস্থিত হয়; মানুষের সেইটুকুই ভগবান। সেইটুকুই সত্য।
নারী নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
🔹নারীর ভালোবাসা আর পুরুষের ভালোবাসা বিভিন্ন রকমের। নারীর ভালোবাসায় মমতা আর চোখের জলে করুণা বেশি। পুরুষের ভালোবাসায় আঘাত আর বিদ্রোহই প্রধান।
🔹দেশকে যে নারীর করুণা নিয়ে সেবা করে সে পুরুষ নয়, হয়তো মহাপুরুষ। কিন্তু দেশ এখন চায় মহাপুরুষ নয়, দেশ চায় সেই পুরুষ যার ভালোবাসায় আঘাত আছে; বিদ্রোহ আছে।
🔹ধর্ম, সমাজ, রাজা, দেবতা কাউকে মেনো না। নিজের মনের শাসন মেনে চল।
🔹মানুষ তাহার পবিত্র পায়ে দলা মাটি দিয়া তৈরি করিল ইট, রচনা করিল মন্দির মসজিদ। সেই মন্দির মসজিদের দুটো ইট খসিয়া পড়িল বলিয়া তাহার জন্য দুই শত মানুষের মাথা খসিয়া পড়িবে? মন্দির মসজিদে চূড়া আবার গড়িয়া উঠিবে এই মানুষের পায়ে দলা মাটি দিয়া, পবিত্র হইয়া উঠিবে এই মানুষেরই শ্রমের পবিত্রতা দিয়া, শুধু তাহারা-ই আর ফিরিয়া আসিবে না, যাহারা পাইল না একটু আলো, একটু বাতাস, এক ফোঁটা ওষুধ, দু'চামচ জল-বার্লি।
🔹মানুষ একটি চিন্তাশীল পশু। তাহার বুদ্ধিবৃত্তি এত প্রবল যে, ইচ্ছা করিলেই সে তাহার ভিতরকার পশুটাকে দুর্দান্ত এবং নির্মম করিয়া তুলিতে পারে।
🔹আমি গাই তারি গান—দৃপ্ত-দন্তে যে যৌবন আজ ধরি অসি খরসান হইল বাহির অসম্ভবের অভিমানে দিকে দিকে।
🔹
মুখর মুখ আর বাচাল নয়ন
লাজ-সুখে আজ যাচে গুণ্ঠন।
🔹
সত্য : এ কথা ধ্রুব সত্য যে, সত্য আছে—চিরকাল ধরে আছে এবং চিরকাল ধরে থাকবে।
🔹সত্যকে জানবার যার বিপুল সত্য ইচ্ছা থাকে তার আঘাতও সত্য সহ্য করে, বুকে করে তার সত্যনিষ্ঠা, সত্যকে জাগাবার আকাঙ্খাকে জগতে ভীরু কাপুরুষ ভন্ড ভক্তদের চোখের সামনে দেখায় যে, এই ফাঁকির পূজারীর ক্রন্দনে সত্য জাগে না।
সৌন্দর্য নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
সুন্দর : আসিয়াছি সুন্দর ধরণীতে সুন্দর যারা তাদের দেখিতে।
🔹সুর আমার সুন্দরের জন্য আর তরবারি সুন্দরের অবমাননা করে যে— সেই অসুরের জন্য।
🔹পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে। সকল কিছু নিয়ম-কানুন, বাঁধন-শৃঙ্খল, মানা-নিষেধের বিরুদ্ধে। আর বিদ্রোহ করতে হলে সকলের আগে আপনাকে চিনতে হবে। বুক ফুলিয়ে বলতে হবে, “আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ।”
ইসলাম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
🔹“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান—মোর—মার”।
🔹
কে কাহারে মারে, ঘোচেনি ধন্দ, টুটেনি অন্ধকার,
জানে না আঁধারে শত্রু ভাবিয়া আত্মীয়ে হানে মার।
🔹
🔹 হিন্দুত্ব—মুসলমানত্ব দুই সওয়া যায়, কিন্তু তাদের টিকিত্ব দাড়িত্ব অসহ, কেননা ঐ দুটোই মারামারি বাধায়। টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়, ওটা হয়ত পন্ডিত্ব। এই দুই “ত্ব” মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ এত চুলোচুলি। আজ যে মারামারিটা বেঁধেছে সেটাও এই পন্ডিত-মোল্লায় মারামারি, হিন্দু-মুসলমানে মারামারি নয় ।
🔹যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল। —মূর্খরা সব, শোনে, মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো!
🔹রবি শশী তারা প্রভাত সন্ধ্য- তোমার আদেশ বহে―এই দিবারাতি আকাশ বাতাস নহে, একা কারো নহে।
🔹
এ ধরণীর যাহা সম্বল,
বাসে ভরা ফুল, রসে ভরা ফল,
সু-স্নিগ্ধ মাটি, সুধা সম জল, পাখীর কণ্ঠে গান,
সকলের এতে সম অধিকার, এই তাঁর ফরমান
🔹
No comments: