নিরক্ষর বাবার প্রি ম্যাচুওর চাইল্ড থেকে জগতসেরা বিজ্ঞানী - স্যার আইজ্যাক নিউটন । পড়ুন আইজ্যাক নিউটনের জীবনী
স্যার আইজ্যাক নিউটনের জীবনী
বিজ্ঞানের আশ্চর্য প্রতিভা আইজ্যাক নিউটন। তাঁর মায়ের নাম Hannah এবং বাবার নাম আইজ্যাক নিউটন সিনিয়র । জন্ম ১৬৪২ খৃষ্টাব্দে। তিনি অকালজাত। মাতৃগর্ভে মাত্র সাত মাস থাকবার পর ভূমিষ্ঠ হন। তার জন্মের তিন মাস আগেই বাবা মারা যান । তাঁর বাবা ছিলেন নিরক্ষর । আর নিউটনের বয়স যখন মাত্র দু’বছর, তার মা হ্যানা নিউটন একজন জমিদার পাদ্রীকে বিয়ে করে বসলেন। সেই পাদ্রী আবার রুগ্ন নিউটনের দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকার করলেন। অর্থাৎ এক অনিশ্চিত, টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাঁর শৈশব কালের সূচনা, তিনিই উত্তরকালে নিজের অনন্য বৈজ্ঞানিক প্রতিভার দ্বারা মানুষের সভ্যতাকে বৃহভাবে সমৃদ্ধ করে যান।
কিশাের নিউটন বেশ কয়েকবছর তার ঠাকুরমার কাছে থাকেন। বারাে বছর বয়স হলে তাকে আশ্রয় দেন ক্লার্ক নামক এক ভদ্রলােক। ক্লার্কের স্ত্রী ছিলেন নিউটনের মার বান্ধবী। তিনি নিউটনকে মাতৃস্নেহ দান করেন। ক্লার্কের বাড়িতে ছিল ওষুধ তৈরি কারখানা। আর ছিল রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যার ওপর রচিত প্রচুর বই। কিশাের নিউটন ওই বইগুলি গভীর আগ্রহে পড়ে ফেলেন। ওষুধ তৈরির ব্যাপারটাও খেয়াল করেন। ক্লার্কের বাড়িতে থাকবার সময় নিউটন নিজের চেষ্টায় কয়েকটি জলঘড়ি ও বাতাসঘড়ি তৈরি করে পরিচিতদের তাক লাগিয়ে দেন।
ষােল বছর বয়সে নিউটন তার জন্মদাত্রী মার কাছে ফিরে গেলেন; কারণ, ইতিমধ্যে হ্যানার দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যু ঘটেছে। প্রথমে নিউটনের মা চেয়েছিলেন ছেলে একজন চাষি হয়ে চাষবাস করে জীবন চালাক । সেই মতো স্কুল ছাড়িয়ে তিনি নিউটনকে চাষের কাজে যুক্ত করে দেন কিন্ত নিউটন চাষের কাজে কোনো আগ্রহ না দেখানোয় শেষ পর্যন্ত মা ছেলেকে ভর্তি করে দেন ট্রিনিটি কলেজে। সেখানে অঙ্কের অধ্যাপক আইজাক ব্যারাে নিউটনের মধ্যে বিরাট সম্ভাবনার সন্ধান পান। বেশ কম সময়ের মধ্যেই নিউটন গণিতে তার বিশেষ ব্যুৎপত্তি দেখালেন।
১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে নিউটন তার মেধার জন্য সরকারি বৃত্তি পান। এই সময় ভয়ঙ্কর প্লেগরােগ মহামারীর আকার নেওয়ায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিউটন তখন তার মায়ের আশ্রয় উলসথরপে ফিরে আসেন। উলসথরপে বছর দেড়েক অবস্থানকালে নিউটন একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পূর্ণ করেন। তিনটিই গণিত বিষয়ক। প্রথমটির নাম বাইনােমিয়াল থিয়ােরেম, দ্বিতীয়টি ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলেশন এবং তৃতীয়টি ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস।
নিউটনের সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার হল মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বা Law of gravitation কে খুঁজে বার করা । যে কারণে পৃথিবীর তাবৎ বস্তুর গতি নিয়ন্ত্রিত হয় সেই একই শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে সৌরজগতের গ্রহ তারকাদের। যে বলের টানে গাছের আপেল শূন্যে না উঠে মাটিতে পতিত হয়, সেই একই কারণে সূর্য, গ্ৰহসকল, নক্ষত্রাদি নিজেদের পারস্পরিক আকর্ষণের সূত্রে সংঘর্ষ এড়াতে পারছে। এটা ছিল এক যুগান্ত কারী আবিস্কার ।
১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে নিউটন আবিষ্কার করলেন আলাের প্রতিসরণ সূত্র বা Law of Refraction of light. নিউটন দূরবীন যন্ত্রের উন্নতি ঘটান। তার দূরবীনে বর্ণ ঘটিত বিভ্রান্তি বা Chromatic Aberration নেই। এই দূরবীনের সাহায্যে গ্রহণক্ষত্রদের প্রকৃত দূরত্ব নির্ণয় সম্ভব হল।
১৬৬৭ খৃষ্টাব্দে নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক হলেন। আশ্চর্য ব্যাপার হলো , অধ্যাপক হিসাবে তিনি একেবারেই জনপ্রিয় ছিলেন না , তিনি পড়াতে খুব একটা ভালো বাসতেন না , ফলে ওনার ক্লাসে বেশিরভাগ সময় ছাত্র ছাত্রীরা আসতেন না । উনি নিজের রিসার্চ ওয়ার্কেই বেশী মন দিতেন ।
১৬৮৪ খৃষ্টাব্দে সৌরবিজ্ঞানী এডমান্ড হ্যালির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। এই হ্যালির নামানুসারেই পরবর্তীকালে হ্যালির ধূমকেতু নাম রাখা হয়। নিউটন তার গবেষণাকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে লিখে রাখেন। নাম Mathematical Principle of Natural Philosophy তিনটি সূত্র নিয়ে গ্রন্থিত হল ‘প্রিন্সিপিয়া।
ছোটবেলার পারিবারিক সমস্যার কারনেই হয়ত স্যার আইজ্যাক নিউটন কোনোদিনো বিয়ে করেননি । সারাজীবন রিসার্চ ওয়ার্ককেই নিজের ধ্যান জ্ঞান করে রাখেন ।
নিউটনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৭০১ খৃষ্টাব্দে তাঁকে করা হল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। ১৭০২ খৃষ্টাব্দে তাকে করা হল দেশের নােট ছাপবার ব্যবস্থাপনার অধ্যক্ষ। এই সময় তিনি নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এমন নোট ও কয়েন তৈরি করান জেগুলো জাল করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। তিনি অ্যাল্কেমী তে ইন্টারেস্টেড ছিলেন এবং অন্য ধাতু থেকে সোনা তৈরির জন্য বিভিন্ন গবেষণা করেছিলেন । ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে তাকে বরণ করে নেওয়া হয় রয়্যাল সােসাইটির সভাপতির পদে। ১৭০৫ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের মহারানী অ্যান আইজ্যাক নিউটনকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৭২৭ খৃষ্টাব্দে পঁচাশি বছর বয়সে এই মহা বিজ্ঞানী ধরাধাম ত্যাগ করেন।
No comments: