শ্রী শ্রী ১০৮ রামদাস কাঠিয়া বাবাজি মহারাজ সারা ভারতে রামদাস কাঠিয়া বাবা বা শুধু কাঠিয়া বাবা নামে পরিচিত । তিনি ছিলেন অসীম ক্ষমতার অধিকারী । তাঁর কিছু বাণী নিচে দেওয়া হলো -
• সাধকের বােঝা প্রয়ােজন, কে খাদ্য দিচ্ছেন, আর কেই বা খাচ্ছেন।
• মানুষ তাে ভগবানের হাতের পুতুল বিশেষ। সুতরাং কারােরই (আসলে) পাপ-পুণ্য আছে বলে ধারণা করাে না।
• শুধু কথা বলার জন্য অনেকেই আছে। কিন্তু কাজ করার মতাে আছে। খুবই কম। শাস্ত্র মুখস্থ করে তােতাপাখি হবে, কিন্তু যদি একবিন্দুও ভক্তিলাভ করাে জীবন ধন্য হয়ে যাবে।
• যার দেহাত্মবােধ আছে, তারই অর্থের প্রয়ােজন আছে। যার অর্থের প্রয়ােজন আছে তারই পুণ্যেরও প্রয়ােজন আছে। (শুধু আত্মবােধে) যােগযুক্তের পুণ্যও নেই পাপও নেই।
• সােনা, রূপাে ইত্যাদি ধনসম্পদ বটে, কিন্তু যখন (নির্দয় চিত্তলাভে) সন্তোষধন প্রাপ্ত হবে, তখন বাকি সব ধন ধুলির সমান মনে হবে।
• বিধিপূর্বক সব কাজ করে যাও এবং অন্তঃকরণে সদা সতর্ক থেকো ভগবান সর্বদা সঙ্গে আছেন এবং দেখছেন। এটি মনে রেখে কাজ করলে জীব সহজেই কল্যাণ লাভ করতে পারে।
• উপবাসে কেন কষ্ট করবে? ভগবদ্ প্রসাদ গ্রহণ করলে তাতে কোনাে দোষ হয় না, কৃচ্ছ্বতায় কিছু প্রাপ্ত হওয়া যায় না।
• সাধুদের কখনাে অবজ্ঞা করবে না। অনেক ভাগ্যবলে সদ্গুরু লাভ হয়—অন্তর আলােকিত হয়ে চেতনার অন্ধকার ফল হয়। সদ্গুরু ভেতর থেকে প্রেরণা দিয়ে থাকেন।
• আন্তরিকভাবে কর্তব্য পালন করবে। নিন্দা-স্তুতির দিকে নজর দেবে না। যা করার করে যাও, অন্তরে বলে যাও “রাধে, রাধে।
• প্রকৃত সাধুগণ কর্মে লিপ্ত হন না। তাঁরা জীবের দুঃখরূপ তাপের মূলকে নাশ করে উপকার সাধন করেন। সেই কারণে তাদের কর্মপদ্ধতির তাৎপর্য সাধারণ চেতনার লােকের বােধগম্য হয় না।
• সত্যিকারের সাধু অল্পই পাওয়া যায়, বেশিরভাগই পেটের লােভে বৈরাগী সাজে। সদ্গুরুর চরণাশ্রিত থেকো। ভণ্ডদের সর্বতােভারে বর্জন করাে।
• নিষ্ঠাপূর্বক সাধন করতে করতে নানা রকম সিদ্ধি (ক্ষমতা) লাভ হতে পারে, কিন্তু তাতে মুক্তিসাধন হয় না, কেবল সদ্গুরুর কৃপাতেই মুক্তি সম্ভব হয়। ওই সব সিদ্ধিতে মােহিত হলে সাধক আর অগ্রসর হতে পারে না।
• একসঙ্গে দুটো হয় না। যদি ধনদৌলত চাও পাৰে, অপরদিকে যদি ভগবানকে পেতে চাও তাও পাবে। (বহির্মুখে বা তার বিপরীতে অন্তর্মুখীন পথে কোনাে) একটিই পাবে।
• হাতির দুরকম দাঁত আছে, একটি বাইরে দেখানাের জন্য, অপরটি মুখের ভেতরে নিজের খাদ্য গ্রহণের জন্য। ভেতরের দাত অন্যদের নজরে পড়ে না। সন্তগণেরও সেই রকম দুটি বৃত্তি আছে। একটি বাইরে দেখাবার জন্য অপরটি নিজের ভেতরের। সেটির খবর কেউ পেতে পারে না।
• ভগবদপ্রাপ্তির বিষয়ে গৃহস্থাশ্রম ও সন্ন্যাসাশ্রমে কোনাে ভেদ নেই। সন্ন্যাস অবলম্বন করে সমুচিত সাধন করলে নানা অলৌকিক শক্তির প্রকাশ হয়, যার দ্বারা সংসারীদের হিতসাধন করা যায়। এই শক্তি সাধারণতঃ গৃহস্থাশ্রমে প্রকাশ হয় না। ভগবদ্প্রকাশ দুই আশ্রমেই সমান।
• প্রারন্ধের ওপর মানুষের কোনাে হাত নেই। কিন্তু চেষ্টা-যত্নের ওপর হাত আছে। আসলে প্রারব্ধ ও পুরুষকার দুটি বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। যতক্ষণ তােমার হাতে একটি ঢ্যালা আছে ততক্ষণ তার নাম “পুরুষকার”, তখনই তাকে বাইরে ফেলে দেবে তখনই তা হয়ে যাবে ‘প্রারব্ধ’। আগে জীবের পুরুষকারের দ্বারা যে শুভ-অশুভ কর্ম অনুষ্ঠিত হয়, পরে তার দ্বারাই জীবটির পরজন্মের “প্রারব্ধ” বা “অদৃষ্ট” তৈরি হয়ে থাকে। অদৃষ্টে কী আছে তা তাে জানা থাকে না, তাই পুরুষকারের চেষ্টা করতেই হয়। প্রতিকার না থাকলেও মানুষ অদৃষ্টের ওপর সব ছেড়ে থাকতে পারে না। অদৃষ্ট খাবার জন্য সে পুরুষকারের আশ্রয় নেবেই। অবশেষে চেষ্টা সত্ত্বেও যখন কোনাে ফল পাবে না, তখনই সে অদৃষ্টের ওপর সব ছেড়ে “বিশ্রান্তি লাভ করে।
• অখণ্ড পরমসত্তা নিগুণ, কিন্তু ভক্ত তাকে সগুণ ভগবান করে নেয়। তিনি নিরাকার হলেও ভক্তের জন্য তাকে সাকার রূপ ধারণ করতে হয়।
• বিচ্ছিন্নতাবােধেই দেহাত্মবােধের মূল কারণ। এই খণ্ড জ্ঞান অজ্ঞানতা প্রসূত। দেহাত্মবােধ নাশ করতে হলে প্রথমে তমাে থেকে রজোতে উঠতে হবে, তারপর রজো থেকে সত্ত্বে উঠে দেহাত্মবােধ দূরীকরণের দ্বারে এসে পৌছানাে যাবে।...ভগবৎকৃপা লাভে চিত্তের গতি, দেহাত্ম গতি ত্যাগ করে, বিপরীত অন্তরাত্মার দিকে প্রবল আকর্ষণ অনুভব করে। সে ক্ৰমে ভগবন্ময় হয়ে যায়, দেহাত্মবােধ দূর হয়ে অহংবােধের নির্বাহ ঘটে।
• “আমি কর্তা” বােধে কাজ না করে আমি তার দাস” এই বােধে কর্তব্য কর্মাদি সন্তোষ ও যত্নের সঙ্গে নির্বাহ করবে।
No comments: