সাঁইবাবার বাণী
• দরিদ্র ও দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকো । কাউকে অবহেলা বা ঘৃণা করাে না। পরােপকারের থেকে তৃপ্তিপ্রদ আর কিছু নেই।
• সব কিছুর উৎস “শুদ্ধ চৈতন্য”। এটি ব্যতিরেকে কিছুরই অস্তিত্ব নেই। এর নিজের কোনাে আকৃতি বা বর্ণ নেই কিন্তু এর অস্তিত্ব স্বতঃসিদ্ধ। এই শুদ্ধচৈতন্যই ব্রহ্মস্বরপ পরমাত্মা। তিনি সৎ-চিৎ-আনন্দ-অদ্বৈত সত্তা। আমরা সকলেই তার মধ্যে আছি, তার সঙ্গে অভিন্নভাবে।
• কেবলমাত্র ঈশ্বরের নাম, গান ও গুণকীর্তন-এটি অতি সহজ পদ্ধতি। যাগ-যজ্ঞ সাধনে আরাধনা কঠিন। শুধুমাত্র হাতে করাে কাম, মুখে করাে নাম’ এই সহজ পন্থায় ভবসমুদ্র নিশ্চিন্তে পার হওয়া যায়।
• গুরুর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে।...যেখানে সাধুসন্ত বা গুরুনিন্দা হয়, সেখানে অবস্থান করবে না।
• একটুও ভেদবুদ্ধি না রেখে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানাদি নিষ্ঠাসহকারে পালন করা উচিত। কোনাে ধর্মকে অসম্মান করাে না। প্রকৃত জ্ঞানী কখনাে জাতি-বর্ণ ইত্যাদির ভেদ দেখেন না। সবের মধ্যেই তাে সেই এক ঈশ্বর। যার মন শুধু ধন সম্পদ আহরণেই মত্ত, সে যদি না এই অনড় ভাবকে সরাতে পারে, অন্তরে জ্ঞানলাভ করবে কী করে? এ যেন কুমীরে ভরা নদী সাঁতরে পার হওয়ার মতাে।
• নৈতিক আদর্শের ওপর বিশ্বাস করাে।যদি কার্যসম্পন্ন করেও তৎক্ষণাৎ ফল না পাও ধৈর্য হারিও না। পর জন্মেও ফল পেতে পারাে।
• ভবসাগরে ভােগাসক্তির মােহ আর ধনের তৃষ্ণা হচ্ছে দুঃখের গভীর আবর্ত, যেখানে ঈর্ষা ও অহমিকারূপ কুমীর কিলবিল করে। যে নির্বাসনা (ইচ্ছা অনিচ্ছা ত্যাগী) হবে একমাত্র সেই এই সাগর পার হতে পারবে, মুক্ত হতে পারবে।
• জগতে বহু সাধুসন্ত আছেন, কিন্তু যার যার নিজের গুরুই তার প্রকৃত গুরু। অন্যান্য সকলে যতই মধুর কথা বলুন না কেন, নিজের গুরুর উপদেশই সর্বদা মান্য।
• অহংভাব ত্যাগ করাে। সর্বদা বুঝতে চেষ্টা করাে, আমরা (স্বরূপতঃ) কর্ম দ্বারা পরিচালিত না ; আত্মা মায়ার বাইরে ; সকল কর্মের কর্তা ঈশ্বর, আমরা নিমিত্তমাত্র। এই উপলব্ধি হলেই মুক্তি। দেখবে কোনাে ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই, আছে শুধু অখণ্ড আনন্দবােধ। যে যতটুকু সাধনা করবে, তদনুযায়ী থাকবে ফল পাবে অবশ্যই।
• আমাদের অন্তরে সুপ্ত রয়েছে মহাশক্তি, তাকে কখনাে তুচ্ছ মনে করাে না। আমরা এই অন্তঃকরণকে মিত্ররূপে বরণ করতে পারি আবার শত্রুতে পরিণত করতে পারি। সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ অহং বৃত্তি নির্ভর। এটিকে মিত্ররূপে গ্রহণের শ্রেষ্ঠ উপায় হলাে এটিকে সদ্গুরুর চরণে সমর্পিত করে তাকেই এটির নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া।
শিরডি সাইবাবার আরো কিছু বাণী
• সুখ-দুঃখ মায়ার ছলনা। এগুলির চিন্তা এলেই মন থেকে সরিয়ে দেবে।
• “ভালাে” বা “মন্দ” সবই প্রকৃতির নিয়মে আপেক্ষিক প্রতিক্রিয়ারূপে প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং কোন্ সময় কোন্ কাজটি সঠিক বা ভালাে তা নির্ভর করে মানুষের চেতনার ঔচিত্যবােধের গভীরতা ও ব্যাপ্তির ওপর।
• বিশ্বচরাচরকে ভালােবাসতে শেখাে। তােমার বিরুদ্ধে কেউ বাজে কথা বললেও চঞ্চল হবে না। তাদের কথায় তােমার শরীরের তাে কোনাে কষ্ট হবে না। মনকে ওই প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারলেই হলাে। “আমি” খুঁজতে তােমায় কোথাও যেতে হবে না। তােমর নাম, আকৃতি তথা দেহ বাদ দিলে তােমার মধ্যে এবং একই সঙ্গে সকল জীবের যে সত্তা থাকে, তা হচ্ছে নিজের অস্তিত্বের চেতনা- এই চেতনার “আমি” (আত্মা) এইরূপ বােধ করলেই তুমি তােমার মধ্যেই আত্মােপলব্ধি করবে এবং সমস্ত জীবের মধ্যেই সেই “আমি” কে চিনতে পারবে। মননের অভ্যাস দ্বারা ঈশ্বরের সর্বব্যাপীত্ব অনুভব করা যায়।
• অন্তঃদৃষ্টিতে দেখতে শেখাে। তখন বুঝবে পরমাত্মার থেকে তুমি ভিন্ন নও। আসলে কেউ মরে না। ছিন্ন বস্ত্রের মতাে স্থূল দেহই বদলায়। মৃত্যুকে ভয় করতে নেই।
• নাস্তিক অধার্মিক ও দুর্জনের থেকে দূরে থেকো। নিরহংকার হয়ে মন-প্রাণ হৃদয় দিয়ে ব্যক্তি সহকারে উপাসনা করাে, তাতেই তুমি প্রাপ্ত হবে দিব্য আনন্দ।
• পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে গেলেও বিবেকের নিষ্ঠায় স্থির থাকবে। নৈতিক জীবন যাপন করবে। তা হলে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত পবিত্র থাকতে পারবে।
• প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্তব্য সমাপন করবে, কিন্তু কেউ নিজের কর্মক্ষমতার জন্য অহমিকাগ্রস্ত হবে না। ভগবানই আসল কর্তা সর্বদাই তাঁর সংস্পর্শে, সর্বতােভাবে তার অধীনস্থ থাকার কথা স্মরণ রাখবে।
• কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থ ও উপভােগের জন্য অর্থ ব্যয় করলে তা নষ্টই করা হয়। দান সেবার মাধ্যমে আসে বৈরাগ্য, ভক্তি ও জ্ঞান।
• একই কাজ দুজনে করলে ফল দুরকম হতে পারে, কারণ প্রত্যেকের গতজন্মের কর্ম তাে অজ্ঞাত, তার জন্যই ফলাফলে তফাৎ হয়।
• কর্মফলবশতঃ মানুষের অদৃষ্টে যা আছে তা ঘটবেই। “আমি” তাে তার সাক্ষীমাত্র। মানুষের রােগ-শােক, দুঃখ-বেদনার মূলেও তিনি, আবার নিরাময়ও তিনিই হওয়ান। যদি কেউ অহমিকা ত্যাগ করে তার ওপর পূর্ণ বিশ্বাসসহ শরণাগত হয়, সে তার কৃপা লাভ করে সমস্ত কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়।
• শুধুই যুক্তি দিয়ে ভাবতে গেলে জন্মান্তর, কর্মফল আদি তত্ত্ব নিয়ে সংশয় জাগে যতকাল অন্তর্মুখী মননে সেই দিব্যশক্তি যা চকিতে সব পরিষ্কার করে দেখিয়ে দেয়, সেটির অনুভব না হচ্ছে, এসব নিছক তত্ত্বকথা বলেই মনে হবে।
• আত্ম উপলব্ধি এক জন্মেই হয় না। তার জন্য যােগ্যতা অর্জন করতে হয়। যেমন, মুমুক্ষুত্ব, অনাসক্তি, অন্তর্মুখীনতা, পাপ পরিহার, সদাচার, শ্রেয়ঃগ্রহণ, ইন্দ্রিয়-সংযম, চিত্তশুদ্ধি, সদ্গুরুর আশ্রয় ও ভগবদ্-কৃপা।
• কারাের প্রতি বিদ্বেষ রেখাে না। সততা ও উদারতাসহ জীবনযাপনের সচেষ্ট হও।
No comments: