AC চলবে, কারেন্টের বিল বাড়বে না - জানুন AC কেনার গাইডলাইন - What is the best Air Conditioner ? AC Buy guide
কিভাবে কম বিদ্যুৎ খরচ করে এয়ার কন্ডিশন চালানো সম্ভব ?
কমবেশি বছর সাতেক ধরে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি বাজারে খুব চলছে। এখন আবার ক্রেতাদের বেশি পছন্দ ডুয়েল ইনভার্টার এসি। এই এসি আরও বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী। তবে প্রযুক্তির দিক দিয়ে। এসি’র দুনিয়ায় একেবারে নবতম সংযােজন, এসি’তে নানা রকমের সেন্সারের ব্যবহার। এর মধ্যে সেরা হল, ইমেজ সেন্সর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য, আপনি ঘরের যেখানেই থাকুন না কেন, সেখানে সমানভাবে ঠান্ডা পৌঁছে যাবে। সােজা কথায়, আপনার গতিবিধির ওপর নজর রেখে আপনাকে আরাম দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ঠান্ডা হাওয়ায় যন্ত্রের শক্তির যে অপচয় হয়, তা এই প্রযুক্তিতে আর হবে না। আবার এমন এসি’ও আছে যা, বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে সমন্বয় রেখেই ঘরকে ঠান্ডা করবে। এখানেই শেষ নয়, এখন মােবাইল অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বাড়িতে ইন্টারনেট বা ওয়াই-ফাই থাকলে এসি’র জন্য আর রিমােট দরকার পড়বে না।
স্প্লিট এসি না উইন্ডাে এসি , কোনটা কিনবেন ?
স্প্লিট এসি অনেক বেশি স্মার্ট। দেখতেও খুব সুন্দর। এর বড় সুবিধা, কম্প্রেসার ইউনিট বাড়ির বাইরে থাকে। তাই কোনও শব্দ হয় না। যদিও উইন্ডাে এসি’তে কম্প্রেসার ইউনিট সঙ্গে থাকায় বেশ শব্দ হয়। উইন্ডাে এসি’র আরেকটা অসুবিধা হল, একটা পুরাে জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়। তাই আলাে বাতাস কম ঢােকে। তবে দামের দিক থেকে প্লিট এসি’র থেকে উইন্ডাে এসি’র দাম কিছুটা কম।
ইনভার্টার এসি কি ?
অনেকের ধারণা বিদ্যুৎ চলে গেলেও ইনভার্টার এসি চালু থাকবে। কারণ, এর মধ্যে একটি ইনভার্টার সেট করা আছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এই এসি চালাতেও f লাগে। ইনভার্টার এসি বা স্টার রেটেড ইনভার্টার এসি প্রধান বৈশিষ্ট্য—এটি সাধারণ স্টার রেটেড এসি’র থেকে অনেকটা বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। ইনভার্টার প্রযুক্তি কম্প্রেসারকে ধীর গতিতে সক্রিয় রেখে বিদ্যুৎ খরচ কমায়। ফলে প্রত্যেক মাসে বিদ্যুৎ বিল অনেকটা কম আসে।
এসি তে ‘টন’ মানে কী ?
এসি’র ক্ষেত্রে টন-এর মানে হল, একটি এসি প্রতি ঘন্টায় যে পরিমাণ তাপ বের করতে পারে তার পরিমাণ। এই ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে আপনার ঘরে কত টনের এসি লাগবে।
কত টনের এসি নেবেন ? এক, দেড় না দু’ টন?
বাজারে এখন এক, দেড়, দু' টন—একাধিক ক্ষমতার এসি পাওয়া যায়। তবে আপনার বাড়িতে কত টনের এসি প্রয়ােজন, সেই সিদ্ধান্ত নিজে না নিয়ে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। শােরুমে বললেই ওরা বাড়িতে প্রতিনিধি পাঠিয়ে দেবে। তাঁরা পরীক্ষা করে বলে দেবেন কত টনের এসি লাগবে। সেই পরামর্শ মেনেই এসি কেনা উচিত।
এসির স্টার রেটিং কী ?
বিভিন্ন এসি’র গায়ে এক বা একাধিক স্টার চিহ্ন থাকে। সাধারণত এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত স্টার চিহ্ন থাকে। আপনার পছন্দের এসি’তে কতটা বিদ্যুৎ খরচ হবে, এটা তারই স্টার রেটিং। যত বেশি স্টার থাকবে তত কম বিদ্যুৎ খরচ হবে।
কোথায় রাখবেন এসি’র আউটলেট ?
সরাসরি রােদ পড়বে না এমন জায়গায় এসি’র আউটলেট (কম্প্রেসার ইউনিট) রাখা উচিত। অনেকে আউটলেটকে রােধ, ধুলােবালির হাত থেকে বাঁচাতে ঢাকা দিয়ে রাখেন। এটা কখনও করা উচিত নয়। এতে আউটলেট খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এসিতে কীভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবেন ?
বাজেট বেশি থাকলে ইনভার্টার এসি কেনাই ভালাে। কারণ, এই এসি বেশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী। তবে ইনভার্টার এসি কেনা সম্ভব না হলে, বেশি স্টার রেটিংয়ের এসি কেনা উচিত। বেশি স্টারের এসি’তেও বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। বিশেষ কোনও প্রয়ােজন ছাড়া। এসি সব সময় ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে চালাতে হবে। এতে শুধু বিদ্যুৎ খরচ কমে না, শরীরও ভালাে থাকে। বারবার এসি চালানাে ও বন্ধ করা যাবে না। যতবার। এসি বন্ধ করে চালাবেন, তত বেশি ইউনিট পুড়বে। আর এসিতে এনার্জি সেভার মােড থাকলে তাও ব্যবহার করতে পারেন।
এসি কেনার আগে কি দেখবেন ?
• আপনার বাড়িতে কেমন এসি প্রয়ােজন তা জানতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
• এসি চললে জোরালাে শব্দ হবে কি না তা আগেই জেনে নিন। কপার কয়েল এসি নিঝখাটে দীর্ঘদিন ধরে চলে। ঠান্ডাও ভালাে হয়।
* এসি ঘরে যেন বাইরের গরম হাওয়া বা রােদ না ঢোকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• সম্ভব হলে প্লিট এসি কিনুন। কারণ, উইন্ডাে এসি সাধারণত জানালায় সেট করতে হয়। সেক্ষেত্রে এসি বন্ধ থাকলেও জানালা খােলা যায় না। ফলে বাইরের আলাে বাতাস সহজে ঢুকতে পারে না।
* এসিতে কী কী প্রযুক্তি বা ফিচার আছে তা দেখে নিন।
• ওয়্যারেন্টি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নিন। অনেক সংস্থা সব কিছুর জন্য পাঁচ বছর ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। আবার কোনও সংস্থা কম্প্রেসার ইউনিটে ওয়ারেন্টি দিচ্ছে দশ বছর। সেই সঙ্গে যে সংস্থার এসি কিনছেন আপনার কাছাকাছি তাদের কোথায় সার্ভিস সেন্টার আছে সেটিও ভালাে করে জেনে নিন।
• এসি চালানাের জন্য বাড়িতে যত ক্ষমতার বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রয়ােজন, তা আছে কি না আগে নিশ্চিত হােন।
• বাড়ির বিদ্যুতের আর্থিং ঠিকমতাে থাকতে হবে।
• যে সংস্থার এসি কিনবেন, সেই সংস্থার প্রতিনিধিকে দিয়ে বাড়িতে এসি ইনস্টল করা ভালাে।
এসি কেনার পর কি কি খেয়াল রাখবেন ?
• ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে চালানাে উচিত। এতে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, তেমনি স্বাস্থ্যকরও।
• এসি যত কম তাপমাত্রায় চালানাে হবে, তত বেশি চাপ পড়বে কম্প্রেসার মেশিনের ওপর। এতে বিদ্যুৎ খরচও বেশি হয়।
• এসি বন্ধ করতে চাইলে প্রথমে রিমােটের মাধ্যমে ইনডাের ও আউটডাের ইউনিট বন্ধ করে তারপর সুইচ বাের্ড থেকে বন্ধ করুন। রাতে স্লিপ মােডে এসি চালালে বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হয়।
• ভােররাতে এসি বন্ধ করে দিন, এতেও কিছুটা খরচ কমবে।
• পুরানাে এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী না হলে সুযােগ বুঝে বদলে নিন।
• প্রতি দু সপ্তাহে অন্তত একবার ফিল্টার পরিষ্কার করতেই হবে।
• বিদ্যুতের অপচয় রুখতে টাইমার প্রযুক্তি ব্যবহার করুন।
• ঘরের বাইরের তাপ ভেতরে ঢুকলে সেই উৎসকে বন্ধ করতে হবে।
• এসি ও সিলিং ফ্যান একসঙ্গে চললে সব জায়গায় সমান ঠান্ডা হয়।
• বছরে অন্তত দু’বার এসি পুরাে সার্ভিস করা উচিত।
বাজার থেকে দরদাম না অনলাইন ?
বাজারে এখন অনেক সংস্থারই আকর্ষণীয় নতুন প্রযুক্তির বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী এসি পাওয়া যাচ্ছে। এসি প্রস্তুতকারী সংস্থা হিসেবে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য নাম হল—ভােল্টাস, ডাইকিন, হিতাচি, ব্লস্টার, স্যামসাং, এল জি, হায়ার প্রভৃতি। এদের ইনভার্টার ও স্টার রেটিংয়ের এক টন, দেড় টন ও দু’ টনের এসি পেয়ে যাবেন। এক টনের ইনভার্টার এসি’র দাম কমবেশি ৩২ হাজার টাকা থেকে শুরু। ৩৫ হাজার টাকা থেকে পাওয়া যাবে দেড় টনের ইনভার্টার এসি। দু’ টনের ইনভার্টার এসি’র দাম শুরু হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা থেকে। সাধারণ স্টার রেটিংয়ের এসি কিনলে ইনভার্টার এসি’র থেকে দু থেকে আড়াই হাজার টাকা কম পড়বে। উইন্ডাে এসি পছন্দ হলে। তাও কিনতে পারেন। দাম কমবেশি ২৩ হাজার টাকা থেকে শুরু।
No comments: