স্বামী অভেদানন্দের বানী - Swami Abhedananda quotes in bengali
• আত্মতত্ত্ব প্রত্যক্ষ করাতেই মনুষ্যজীবনের সার্থকতা। সত্যতত্ত্ব উপলব্ধি ও মুক্তি লাভে সমর্থ করে তাই ধর্ম।
• জগতের যা মূলতত্ত্ব,দেশ-কালনিমিত্তের অতীত সেই সত্যতত্ত্বকে যথাযথ সাধনার দ্বারা সাক্ষাৎ উপলব্ধির (পন্থার) নামই ধর্ম। “অবিদ্যা” মানে “অজ্ঞান” অর্থাৎ যে (ভ্রান্তিবােধক) অবস্থায় মানুষ নিজের দিবা (আত্ম) স্বরূপকে জানে না তাকেই “অবিদ্যা”বলে।
• শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যানাসনে অভ্যাসের ফলে ব্রহ্মের সঙ্গে নিজের স্বরূপগত ঐক্য ও অভিন্নতা উপলব্ধিই “জ্ঞানযোেগ”। জ্ঞানযােগ সিদ্ধ হলে সাধক উপলব্ধি করে, “আমি” সর্বব্যাপী অবিনাশী অব্যয় আত্মা। জন্মহীন, মৃত্যুহীন, আমার স্বরূপ সমস্ত বিকার ও প্রপঞ্চের অতীত।
• মনের ভেতর নানারকম বাসনা, কামনা লুকিয়ে থাকে, পূর্ব-পূর্ব জন্মের অসংখ্য সংস্কার মনের তলায় গভীর ভাবে জমাট হয়ে থাকবে। এই সমস্ত থেকে একেবারে মুক্ত না করতে পারলে মনকে ধ্যানে স্থির করা যায় না, যারা আবেগতাড়িত তারা যােগ-সাধনের অধিকারী নয়। মন যখন ইন্দ্রিয়ের রাজ্য ছাড়িয়ে একেবারে অতীন্দ্রিয়লােকে স্থির হয়, তখনই দিব্যানুভূতির শুরু।
• আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার (ঐক্যবােধক) অবিচ্ছিন্ন মিলন “যােগ বলে, ধর্ম লাভের জন্য যে সমস্ত সাধনপথ আছে সেগুলিকেও “যােগ” বলে। এক এক রকম “রুচির” সাধকের জন্য এক এক রকম যােগের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
• সাম্প্রদায়িকতা দ্বারা কোনােদিনই কখনাে কল্যাণ হয়নি, বরং যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবে মানুষ ধর্মের প্রকৃত আদর্শ ও লক্ষ্য ভুলে যায়। প্রকৃত ধর্ম কখনাে যুক্তিকে অস্বীকার করে না, বরং বিজ্ঞানের সত্যান্বেষী নির্দেশ ধর্ম লাভেরও সহায়ক। যে ধর্ম কোনাে ব্যক্তিতে,পুস্তকে বা সম্প্রদায়ে আবদ্ধ তা কখনাে সত্যতত্ত্বের সন্ধান দিতে পারে না।
• ছেলেমেয়েদের শৈশব থেকেই শেখাতে হবে জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকলকে ভালােবাসতে। তবে আর সামাজিক বিভিন্নতায় কিছু আসবে যাবে না। উদ্দেশ্য সৎ রাখতে হবে।
• নাম-সাধন করা, কীর্তন করা বা ধ্যান করার কোনাে নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। যখনই সুযােগ পাবে করা উচিত। “জড়” জ্ঞেয়র বিষয় আর চৈতন্যময় “আত্মা” জ্ঞাতারূপ বিষয়ী।...জ্ঞাতা আত্মা বা বিষয় আছে বলেই জ্ঞেয় বিষয় বা অনাত্মপদার্থের বিদ্যমানতা সম্ভবপর। জড় হতে কখনাে জ্ঞাতার উৎপত্তি হতে পারে না।
• ধারণা ও একাগ্রতাই সর্ব সাফল্যের মূল রহস্য। ধারণাশক্তি ও আধ্যাত্মিকতা না থাকলে, চিত্রকর, ভাস্কর, গায়ক বা দার্শনিক কখনাে স্ব-স্ব বিদ্যায় (যথার্থ) পারদর্শী হতে পারেন না। সম্প্রদায়ের গোঁড়ামিতে বদ্ধ হলে ধর্ম লাভ কখনােই হয়।
• মনের যে অবস্থায় ঈশ্বরকে সাক্ষাভাবে উপলব্ধি করা যায়, তাকে ‘পরচেতন' অবস্থা বলে।
• যার ভেতর কিছু সার (সু-সংস্কার) আছে, সে যদি সাধু-মহাপুরুষের সঙ্গ করে তাহলে তারই চৈতন্য লাভ হয়, অপরের হয় না।
• ব্রহ্ম নামরূপের অতীত অধিকারী সত্তা। তিনি ছাড়া আর কোনাে দ্বিতীয় সত্তা নেই। দেশ-কাল ও নিমিত্তের মধ্য দিয়ে ব্রহ্ম জীব ও জগরূপে প্রতীয়মান হচ্ছেন। যার প্রভাবে মানুষের মনে ব্ৰহ্মকে জগৎ বলে ভ্রম (বােধ) হয় তারই নাম মায়া।
• সরল, সত্যপরায়ণ ও সংযমী ব্যক্তিই ধর্মলাভের অধিকারী, ইন্দ্রিয়বৃত্তি ও মনকে যিনি নিজের আয়ত্তে এনেছেন, একমাত্র তিনিই ধর্মকে জানতে পারেন। কু-চিন্তা যতক্ষণ থাকে, মন কিছুতেই ধর্ম সাঞ্চনায় স্থির ও শান্ত হয় না। সু-চিন্তা ও সৎকর্মের অভ্যাসই মনঃসংযমের প্রধান উপায়। মনকে সংযত করতে পারলে কু-চিন্তা ওঠে না-কুচিন্তা উঠলে বিচার করে তাড়িয়ে দেবে। অসৎ-সঙ্গে কু-চিন্তা প্রবল হয়। সেই কারণে সৎ-সঙ্গ করবে।
• প্রত্যেকের মধ্যেই সেই আত্মা বিরাজিত। সুতরাং কেউ আমার ভালাে করলাে কিনা তা দেখবার প্রয়ােজন নেই। আমি প্রত্যেককে ভালােবাসবাে। এই উপলব্ধির বিরাট ভিত্তির ওপর আমাদের একতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের মধ্যে হাজার শ্রেণি বিভাগ থাকুক, আমরা সকলেই ভগবানের সন্তান, সুতরাং আমরা এক।
• যাঁরা বিশ্বমানবতার বেদীর ওপর স্বার্থ বলি দিয়েছেন, তারাই জগতে মহৎ কার্য সম্পাদন করেছেন।
• আত্মা ও পরমাত্মা একই সত্তা। জীবভাবে আত্মা স্ব-স্বরূপে পরমাত্মা। বিশ্বাত্মা অদ্বিতীয় অনন্ত সত্তারূপ সমুদ্র, যাতে অসংখ্য আবর্তের ন্যায় “ব্যাক্তিরূপে” জীবাত্মাসমূহ বিরাজ করছে।
• সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে গোঁড়ামি, কু-সংস্কার ও যুক্তিহীন আচার নিয়মে অভিভূত থাকা। প্রকৃত ধর্মের প্রকৃতি বিশ্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক। ধর্মকে সঠিক ভাবে জানতে হলে সংকীর্ণতা ও যুক্তিহীন বিশ্বাসকে একেবারে ত্যাগ করতে হবে। আজগুবি বিষয়ে বিশ্বাস, ভােজবাজী, ভুতুড়ে কাণ্ড, অবিচার প্রভৃতি কখনই ধর্মের বিষয় নয়। আসল ধর্মের সঙ্গে এই সব সত্যবিরােধী ব্যাপারের কোনাে সম্বন্ধ নেই।
No comments: