রোজ অনেকে মুঠো মুঠো গ্যাস অম্বলের ওষুধ খান। অনেকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে নিজের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ইচ্ছামতো ওষুধ খান । আজকাল আবার অনেকে অনলাইন থেকে ওষুধের কার্যকারিতা দেখে নিয়ে নিজেই নিজের ডাক্তারি করা শুরু করে দেন । এর ফলাফল কী ভয়ানক হতে পারে আপনি ভাবতেও পারবেন না । অন্য রোগের কথা বাদ দিন , বাঙালীর আদরের "গ্যাস-অম্বল" রোগের ওষুধ সম্বন্ধেই কিছু আলোচনা করা যাক -
এক্ষেত্রে দু'টি জিনিস মনে রাখতে হবে
- বহু গ্যাস-অম্বলের রোগী রোজ সকালে একটা করে প্যান্টোপ্রোজল বা ওমিপ্রোজল অথবা ল্যানসোপ্রোজল জাতীয় গুযুধ খান। এই ধরনের ওধুধ 'অ্যান্টাসিড' হিসাবেই খান। অথচ এগুলো একটাও অ্যান্টাসিড নয়। অ্যান্টাসিড তো শরীরে উৎপন্ন অতিরিক্ত অ্যাসিড নস্ট করে , কিন্ত এই ওষুধ গুলো শরীরে অ্যাসিড তৈরির সম্ভাবনাকেই নষ্ট করে দেয়। এটাই একটা বড় সমস্যা । কারন সব প্রানীর শরীরেই খাবার হজম ও অন্যান্য প্রয়োজনে নির্দিষ্ট পরিমান অ্যাসিডের প্রয়োজন ।
- অ্যান্টাসিড সেগুলোই, যেগুলো শরীরে তৈরি হয়ে যাওয়া অ্যাসিড কমাতে পারে। কোনও রোগীর যদি কোনও ওষুধের প্রভাবে বা শারীরিক নানা সমস্যায় ঘন ঘন অ্যাসিডিটি হয়, তার সেই প্রবণতা কমাতে অনেক সময় এই প্যান্টোপ্রোজল, ওমিপ্রোজল, ল্যানসোপ্রোজল জাতীয় ওষুধ দিতেই হয়। অনেক সময় রোগী অনুযায়ী ডাক্তারবাবুরা নির্দিষ্ট কিছু গ্যাসের ওষুধকে কনটিনিউ করতে বলেন । সেটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে রোগীর পরিস্থিতির উপর। দেখুন ভিন্ন রকমের খাবার খেলে অল্প বিস্তর গ্যাস অম্বল হতেই পারে কিন্ত বাঙালিরা যেহেতু সারাক্ষণ গ্যাস-অম্বল নিয়ে মাথা ঘামায়, তাই কিছু হতে না হতেই মুঠো মুঠো গ্যাসের ওষুধ খেয়ে ফেলে। অবশ্যই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবও পড়ে শরীরে।
কেমন সে প্রভাব?
প্রথমত, গ্যাস-অম্বলের কোনও ওষুধই এভাবে ওভার দ্য কাউন্টার প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনাবেচার আইন নেই। কিন্ত এদেশে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই কাজ সমানে চলছে। শরীরের পক্ষে কোনটা প্রয়োজনীয়, কোনটা নয়, সেটা রোগী বুঝতে পারেন না। শরীরে সবসময় সবরকমের ওষুধ চলে না। একবার কোনও একটা ওষুধে গ্যাস-অম্বল কমেছিল বলে সবসময় সেটাই হবে, এমন ভাবলে কিন্তু আখেরে ক্ষতি রোগীরই। তাই আমরা সাজেস্ট করি গ্যাস-অম্বলের সমস্যা যদি নাছোরবন্দা হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবেই উপযুক্ত ওষুধ খান ।
ভুল বা অতিরিক্ত গ্যাস-অম্বলের ওষুধ খেলে ঠিক কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়?
একটি নির্দিষ্ট ওষুধে সকলের যে সমান অ্যাডভার্স ড্রাগ রিয়্যাকশন হবে, এমন কিন্তু নয়। এক-একজনের শরীরে এক এক রকমের পার্শ্প্রতিক্রিয়া হয়।
প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেলে হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। বি-১২ ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। এই ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেলে অম্লের ভাগ অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে রি-বাউন্ড অ্যাসিড তৈরি হয়। মানে, আসিড কমতে কমতে শরীরে ক্ষারের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীর নিজেই আবার পাল্টা আাসিড তৈরি করতে পারে। তখন প্রকৃত ভাবেই ঐ নির্দিষ্ট ওষুধ শরীরে কোনো কাজ করবে না বরং বিপরীত ক্রিয়া সৃষ্টি করবে ।
আ্যালুমিনিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে। ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড খেলে ডায়ারিয়া হয়। কিছু অ্যান্টাসিড আছে, যেগুলি রুটিনে থাকা অন্য ওষুধের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- মনে রাখবেন ওযুধ আছে যেগুলি চটজলদি কাজ করে। মাঝেমধ্যে খেলে অত অসুবিধা হয় না। কিন্ত বাতিকে পড়ে নিয়মিত খেলে শরীরে ক্ষার বেড়ে অ্যাসিড ক্ষারের ভারসাম্য নস্ট হয় যা আখেরে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতিই করে ।
No comments: