শরীরকে পূর্ণ সুস্থ রাখতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালাে রাখা দরকার। তাই এমন কিছু যােগাসনের কথা আলোচনা করা হলো যাতে শরীর ও মন দুই ভালাে থাকে । শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্ডিও ভাসকুলার, নারভাস ও মাসকুলার ব্যায়াম যেমন জরুরি তেমন মনকে সুস্থ রাখতে চাই ধ্যান ও প্রাণায়াম। অল্প বয়স থেকে রােজ সকালে যদি সূর্যনমস্কার আসনটি অভ্যাস করা যায়, তাহলে ওই একটা ব্যায়ামের মাধ্যমেই শরীরের সার্বিক দেখভাল করা সম্ভব। এই আসনটি প্রথমে পাঁচবার অভ্যাস করতে হবে এবং ক্রমশ বাড়িয়ে দশবার পর্যন্ত অভ্যাস করলে শরীর নীরােগ ও সুস্থ থাকবে। শরীরকে সতেজ রাখার জন্য এছাড়াও ব্যাক বেন্ডিং, স্ট্রেচিং, টো টাচিংয়ের মতাে কিছু আসন অভ্যাস করা যেতেই পারে। ব্যাক বেন্ডিংয়ের জন্য ধনুরাসন, নৌকাসন অভ্যাস করা ভালাে। ফরওয়ার্ড বেন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে পদহস্তাসন, জানুশিরাসন গােছের আসন অনবদ্য। কিন্তু বয়স অনুযায়ী যেমন আসন শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখে তার কয়েকটি প্রকার পদ্ধতি জেনে নেওয়া জরুরি।
৫ থেকে ১২ বছরের বাচ্চাদের জন্য:
এই বয়সে বাচ্চারা একটু চঞ্চল থাকে। কোনও কিছুতেই সহজে মন দিতে পারে না। তাই এই বয়সে শরীর ও মন সচল রাখতে চাই বৃক্ষাসন। পাশাপাশি ধনুরাসন ও শশঙ্গাসনও উপকারী।
বৃক্ষাসন: একপায়ে দাঁড়িয়ে মেরুদণ্ড সােজা রেখে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। হাত দুটো জোর করে সামনে চিবুকের সঙ্গে লগিয়ে রাখতে হবে নমস্কার করার ভঙ্গিতে। এইভাবে মনে মনে দশ গুনতে হবে। পরে তা বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনতে হবে। এই ব্যায়ামে মনঃসংযােগ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১৩ থেকে ২৫ বছর বয়সের জন্য:
এই বয়সে শরীরে হঠাৎ অনিয়ম শুরু হয়। তাই এই সময় ডাইজেস্টিভ এফিশিয়েন্সি বা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তােলা দরকার। এই বয়সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযােগী আসন ধনুরাসন। পাশাপাশি জানুশিরাসনও অভ্যাস করা ভালাে।
ধনুরাসন: উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে গােড়ালি দুটো জোড়াভাবে নিতম্বের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এরপর দু’হাত দিয়ে পায়ের গােছদুটো ধরে ঊরু থেকে মাটির ওপরে তুলে ফেলতে হবে। একইভাবে মাথা থেকে বুকও মাটি থেকে তুলে ফেলতে হবে। এমনভাবে তা করতে হবে যাতে শুধু পেট মাটিতে ঠেকে থাকে। এইভাবে মনে মনে দশ গুনতে হবে। পরে তা বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনতে হবে। এই ব্যায়াম নিয়ম করে অভ্যাস করলে হজম ক্ষমতা ভালাে হয়।
২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের জন্য:
এই বয়সে শরীর ক্রমশ ভাঙতে থাকে। ৪০ বছরের পর বিশেষভাবে শরীরের যত্ন নেওয়া দরকার। অনেক সময় শরীরের সঠিক চালনার অভাবে শরীর স্টিফ হয়ে যায়। তাই এই বয়সে এমন আসন অভ্যাস করা উচিত যাতে শরীর সচল থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য শলভাসন। এছাড়া অর্ধকূর্মাসন, কপালভাতি ও উৎকটাসনও এই বয়সের জন্য উপযুক্ত।
শলভাসন: উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো শরীরে দু’পাশে সােজা করে রেখে হাতের তালু উড়র নীচে রাখুন। থুতনিটা যেন মাটির সঙ্গে ঠেকে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এরপর প্রথমে ডান পা উড় থেকে ওপর দিকে সােজা করে তুলে দশ গুনুন। তারপর একই উপায়ে বাঁ পা তুলুন। এইভাবে দুটি পা তিনবার করে তুলন। এবং প্রতিবারই দশ পর্যন্ত গুনুন। তারপর একত্সঙ্গে দুটি পা তুলে প্রথমে দশ ও পরে তা বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনুন। শলভাসন নিয়ম করে অভ্যাস করলে বাত জাতীয় ব্যথা কমে আর স্নায়বিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।
৫০ থেকে ৮০ বছরের জন্য:
এই সময় হঠাৎ করেই শরীরটা বুড়িয়ে যায়। তাই এই বয়সে নিয়মমাফিক যােগাসনের অভ্যাস খুবই জরুরি। নানা রকম রােগ এই বয়সে দেহে বাসা বাঁধে তাই শরীরের সার্বিক উন্নতির জন্য ব্যয়াম করা দরকার। ভুজঙ্গাসন এই বয়সের জন্য খুবই উপযােগী আসন। এছাড়াও অর্ধশলভাসন ও অর্ধকুর্মাসনও অভ্যাস করতে পারেন।
ভুজঙ্গাসন: উপুড় হয়ে শুয়ে হাতের তালু বুকের দু’পাশে মাটিতে সােজা করে পেতে রাখুন। হাতের কনুই যেন গায়ের সঙ্গে লেগে থাকে। পা দুটো সােজা করে পায়ের পাতা মাটির সঙ্গে ঠেকিয়ে রাখুন। এই অবস্থায় শরীরে উপরের ভাগ ক্রমশ মাটি থেকে তুলতে থাকুন।এমনভাবে যাতে পেট পর্যন্ত মাটিতে ঠেকে থাকে কিন্তু বুক ও মাথা উপরে থাকে। এইভাবে প্রথমে দশ ও পরে বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনুন। এই আসনটি মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে মানসিক শান্তি আসে। তাছাড়া গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
No comments: