ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করার জন্য দরকার খাদ্যে সঠিক পরিমান প্রোটিন , ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ । বেশিরভাগ শাকসবজী ও ফলমূলে অল্প বিভিন্ন খাদ্যগুন থাকেই । এমন কোনো ফল বা শাক সবজী নেই যা মানুষের শরীরে বিপজ্জনক কোনো রোগ সৃষ্টি করে । কিন্ত এমন কিছু ফল , শাক ও সব্জি আছে যাদের মধ্যে কিছু অসাধারন গুন থাকায় ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে - এদের এক কথায় সুপার ফুড বলা চলে । এরা শুধু ইমিউনিটিই বারায় না , শরীরের পুস্টি বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে । এমনই ১০টি সুপার ফুডের তালিকা দেওয়া হলো । এগুলো ভারতের বাজারে সহজ লভ্য ।
১। কাঁচা ও পাকা পেপে :
পেঁপেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেট থাকে, এগুলি সমস্তই আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। একজন পরিনত বয়স্ক মানুষের একদিনে যে পরিমান ভিটামিন C প্রয়োজন তার দ্বিগুন পরিমান ভিটামিন C একটা মিডিয়াম সাইজের পেঁপেতে থাকে । আর পেঁপের বিখ্যাত এনজাইম প্যাপাইনকে কে না চেনে , এই এঞ্জাইমের কারনেই বদহজমের সহ পেটের বহু সমস্যার মোক্ষম জবাব কাঁচা পেঁপে ।
২। ক্যাপসিকাম বা মিস্টি লঙ্কা
সাধারনত আমরা মনে করি টক জাতীয় ফলেই ভিটামিন C বেশী থাকে । কিন্ত টক জাতীয় ফলের থেকে অনেক বেশী ভিটামিন C পাওয়া যায় ক্যাপসিকামে । তবে লাল রঙের ক্যাপসিকামে ভিটামিন C এর পরিমান সবথেকে বেশি । যেখানে একটি ভালো মানের কমলালেবুতে ৪৫মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন C থাকতে পারে সেখানে একই ওজনের ক্যাপসিকামে ১২৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন C-এর উপস্থিতি দেখা গেছে । এছাড়াও এগুলি বিটা ক্যারোটিনের একটি সমৃদ্ধ উত্স। কাজেই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্যাপসিকাম একটি সুপার ফুড তা নিঃসন্দেহে বলা চলে ।
৩। রসুন
রসুন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রান্নাঘরে পাওয়া যায়। এটি খাবারে খানিকটা জিঙ্ক যুক্ত করে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যক। সভ্যতার গোড়ার দিকে সংক্রমন যোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিরুদ্ধে রসুনের ব্যাবহার পাওয়া যায় । রসুন ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহ সতেজ রাখে এবং রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। রসুনে থাকে অ্যালিসিন , এই অ্যালিসিন হল একধরনের সালফার যুক্ত যৌগ । এই অ্যালিসিনের জন্যেই রসুন রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিষণ ভাবে কার্যকারী ।
৪। আদা
বলা হয় " রসুন আর আদা , যেন ভাই আর দাদা " একে ছাড়া অন্যের চলে না । মানব শরীরে রসুনের মতোই আদার গুন অপরিসীম । আদা প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে । গলার ব্যাথা এবং প্রদাহজনিত অসুস্থতা কমাতে সহায়তা করে। আদা বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। আদা ক্রনিক পেইন হ্রাস করতে পারে এবং এমনকি কোলেস্টেরল-হ্রাস করার বৈশিষ্ট্য এতে আছে । কাজেই রসুন ও আদাকে সুপার ডুপার ফুড বলা চলে ।
৫। দই
দই মানে কিন্ত নবদ্বীপের সুস্বাদু মিস্টি দইয়ের কথা বলা হচ্ছে না । কোনো প্রিসারভেটিভ , কালার ও চিনি ছাড়া বেসিক টক দইকেই সুপার ইমিউনিটি ফুডের খেতাব দেওয়া চলে । খাটি দুধের টক দই -এ থাকে ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম , ফসফরাস ও যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন D । দই-এ প্রোটিন থাকে অনেকটা । কাজেই দৈনিক ১০০ গ্রাম দই বিভিন্ন ভাবে শরীরের উপকার করে । কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে নিয়মিত দই খেলে কোরোনা রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায় ।
৬। হলুদ
বাঙালীদের কাছে হলুদের পরিচয় রকমারি রান্নায় আর বিয়ের আগে গায়ে হলুদে । বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে জড়িত এই হলুদের গুনও প্রচুর । কাঁচা হলুদের উজ্জ্বল হলুদ রঙের কারন এতে থাকা কারকিউমিন । এই কারকিউমিন ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । দুধের সাথে বা কাঁচা হলুদ খেলে মানব শরীরে অনেক ধরনের ব্যাথা বেদনা নাশ হয় । কোরোনা মোকাবিলায় ইমিউনিটি বাড়াতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার । তাই হলুদকে অন্যতম ইমিউনিটি বুস্টার বলা চলে ।
৭। ব্রকলি ও পালং শাক
ব্রকলি বা গ্রাম্য ভাষায় সবুজ-ফুলকপি -তে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন A, C এবং E । আছে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । কাজেই ব্রকলিকে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সেরা সবজী বলা চলে । অবশ্য ব্রকলি সবজীর দিকে সেরা হলেও শাকের রাজা পালং শাক । পালং শাকে আছে প্রচুর ভিটামিন C , বিটা ক্যারোটিন , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । কাজেই কোরোনা সহ আরো অনেক মারন রোগ থেকে বাঁচতে , ইমিউনিটি মজবুত করতে সাপ্তাহিক মেনুতে অন্তত ২ দিন পালং শাক ও দু'দিন ব্রকলি রাখা দরকার । তবে বাঙালীরা তাদের রেসিপিতে সব শাক সবজীকেই ঘ্যাটে পরিনত করে ফেলে , এতে খাদ্যগুন নস্ট হয় । এটা না করে ভালো হয় সবজী ভাপিয়ে বা কম সেদ্ধ করে খেতে ।
মোটামুটি এই ৭ সহজলভ্য খাবারের মাধ্যমে বাড়িয়ে ফেলুন ইমিউনিটি । আর লেখাটা ফেসবুকের মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের জানবার সুযোগ করে দিন ।
No comments: