এখানে আপনি বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন কিভাবে মায়াপুর যাবেন । কি কি দেখবেন ? কোথায় থাকবেন এবং আরো অন্যান্য খুঁটিনাটি ব্যাপার ।
মায়াপুর ভ্রমণের উপর আমাদের বিস্তারিত ভিডিও দেখতে পারেন এখানে ক্লিক করে ।
মায়াপুর আসবেন কিভাবে ?
ট্রেনে পথে এলে শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশন , সেখান থেকে অটো বা ম্যাজিক গাড়ি ধরে স্বরুপগঞ্জের ঘাট । এই ঘাট থেকে নৌকায় নদী পার করলে প্রবেশ করবেন মায়াপুরে । এটাই সবথেকে প্রচলিত পথ । অটোর ভাড়া পরবে মাথাপিছু ২৫টাকা , নৌকা ভাড়া ২ টাকা ।
হাওড়া থেকে ট্রেনে এলে বিষ্ণুপ্রিয়া বা নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে নেমে নবদ্বীপ থেকে নৌকায় চড়ে মায়াপুরে আসা যায় ।
আর, বাসে বা প্রাইভেট গাড়িতে সহজেই মায়াপুর আসা যায় । কোলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে করে সরাসরি মায়াপুরে আসা যায় । নিজস্ব গাড়িতে এলে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে বহরমপুর যাওয়ার রাস্তায় বাহাদুরপুর পার করার পর এই মোড়টি দেখতে পারবেন । এখান থেকে কয়েক কিমি জার্নি করলেই মায়াপুর ইস্কন মন্দিরের সামনে পৌঁছে যাবেন । যারা নদী পার করতে চান না তাদের জন্য এই পথটিই সঠিক ।
এবার জেনে নিন মায়াপুরে কি কি দেখবেন ?
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পদধূলিতে ধন্য এই মায়াপুর । নদীয়া জেলার মায়াপুরের প্রাচীন নাম ছিল মিয়াপুর , এখানে এখনো হাজারো হিন্দু মুসলমান একই বৃন্তে দুটি কুসুমের মতো একসাথে বসবাস করেন । তাই পথ চলতে চলতে রাস্তার আসেপাশে অজস্র মন্দির ও আশ্রমের সাথে বেশ কিছু মসজিদও দেখতে পাবেন । তবে মায়াপুরের প্রধান আকর্ষণ ইসকন মন্দির । বাসে বা নিজস্ব গাড়িতে এলে ইস্কনের সামনেই গাড়ি থেকে নামতে পারবেন । আমরা স্কুটারে গেছিলাম । ইস্কনের ভিতরেই দু'চাকা ও চার চাকা পার্ক করার জায়গা আছে । সামান্য ১০ টাকার বিনিময়ে এখানে বাইক রেখে প্রবেশ করলাম ইস্কন মন্দির প্রাঙ্গনে । ইস্কনের ৬ লক্ষ স্কয়ার ফুটের এই বিশাল এলাকার মধ্যে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে বড় বিষ্ণু মন্দির , আছে চন্দ্রোদয় মন্দির আর শ্রীল প্রভুপাদের সমাধি মন্দির ।
আপনি ইস্কনের মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করলে সবার আগে এই মন্দিরটি দেখতে পাবেন । এটি হল শ্রীল প্রভুপাদের সমাধী মন্দির । এখানে প্রবেশ করার জন্য উলটো দিকের জুতো রাখার কাউন্টারে আগে যেতে হবে । এই কাউন্টার থেকে বস্তা নিয়ে তার ভিতরে জুতো রেখে জমা দিলে আপনাকে একটি কুপন নাম্বার দেবে , সেই কুপনটিতে কত নাম্বার লেখা আছে ভালো করে দেখে নেবেন , তারপর সেটিকে জত্ন করে রেখে দেবেন । কুপন হারিয়ে ফেললে এবং কুপনের নাম্বার ভুলে গেলে জুতো নেওয়ার সময় অনেক ঝামেলা হয়ে যায় তাই অবশ্যই এখানে সাবধানতা অবলম্বন করবেন , মনে রাখবেন জুতো রাখার বা নেওয়ার জন্য কোনো টাকা লাগে না । জুতো রাখার কাউন্টারের পাশেই আছে মোবাইল রাখার কাউন্টার । এখানে মোবাইল , ক্যামেরা সব জমা রাখতে হবে । এখানে ১০টাকা লাগবে । এখানেও একটা কুপন দেবে , কুপন দেওয়ার সময় আপনার নাম লিখে নেবে । এই কুপোনটাকেও খুব সাবধানে রাখবেন ।
সব কিছু জমা দিয়ে রেলিং ধরে লাইন দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে । মন্দিরে প্রবেশের আগে আপনার সিকিউরিটি চেকাপ হবে ।
ভিতরে অনেক কিছু দেখার আছে । মন্দিরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে প্রভুপাদের একটি পিতলের মুরতি আছে , আর সম্পূর্ণ ছাদে কাঁচের কারুকাজের মধ্যে দিয়ে মহাপ্রভুর জীবনের অনেক ঘটনা বর্ণনা করা আছে । এই সুত্রে জানিয়ে রাখি শ্রীল প্রভুপাদের প্রকৃত নাম শ্রী অভয়চরন দে , এবং ওনার জন্ম কোলকাতার এক কৃষ্ণ ভক্ত পরিবারে । ওনার ৬৯ বছর বয়সে প্রথম আমেরিকা গিয়ে কৃষ্ণ কনশাশ্নেশ প্রচার করা শুরু করেন এবং পরবর্তী মাত্র ১২ বছরের সময়কালে সারা পৃথিবীজুড়ে ভগবান কৃষ্ণের মাহাত্ম্য প্রচারে সমর্থ হন । তাঁর মৃত্যুর পর শিশ্যদের অপার পরিশ্রম এবং লক্ষ লক্ষ কৃষ্ণভক্তদের সাহায্যে আজ সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে একাধিক কৃষ্ণ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই মন্দিরটি বিশ্বজয়ী ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদের সমাধি মন্দির । এর দ্বিতলে প্রভুপাদের জীবন ও কাজের উপর একটি গ্যালারী বানানো আছে , অবশ্যই সময় নিয়ে দেখবেন । সিড়ি বেয়ে মন্দিরের ছাদে চড়া যায় । সেখান থেকে দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর । এর ভিতরে ফটো তোলা বা ভিডিও করা খুব কঠোর ভাবে নিশিদ্ধ ।
সমাধি মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে পাশেই ইসকনের অন্যান্য সাধু সন্তদের সমাধি ক্ষেত্র দেখতে পাবেন । দয়া করে চটি জুতো পড়ে এখানে প্রবেশ করবেন না ।
এটি দেখে নিয়ে তারপর আপনি জুতোর কাউন্টারে কুপন জমা দিয়ে জুতো এবং মোবাইল কাউন্টার থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে মেইন মন্দির অর্থাৎ চন্দ্রোদয় মন্দিরের দিকে যেতে পারেন ।
এই হলো চন্দ্রোদয় মন্দির । এর পাশেই আরেকটি জুতো ও মোবাইল কাউন্টার দেখতে পাবেন , আগের মতোই জুতো ও মোবাইল জমা দিয়ে মেইন মন্দিরে প্রবেশ করুন । আগের মন্দিরের মতোই এখানেও সিকিউরিটি চেকাপ হবে । মন্দিরে প্রবেশ করে একপাশে অসাধারন রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ ও অন্যপাশে গৌর নিতাই বিগ্রহ দেখতে পাবেন । এছাড়াও নৃসিংহ দেবের মূর্তি ও প্রভুপাদ শ্রীলের একটি ভব্য মূর্তি দেখতে পারবেন । মন্দিরের ভিতরের শীতলতা আপনার প্রান জুড়িয়ে দেবে নিশ্চিত । মন্দির সংলগ্ন কাউন্টার থেকে ভোগ নিবেদনের জাবতীয় সামগ্রী পেয়ে যাবেন । আমরা ইসকন গেলেই এখান থেকে তিন চার রকমের কেক কিনি , সম্পূর্ণ নিরামিশ এমন সুস্বাদু কেক আর কোথাও পাবেন না । অবশ্যই কিনবেন ।
Timing of ISKCON Main mandir:
এই মন্দির ভোর ৪-৩০ থেকে ৫টা৩০ পর্যন্ত খোলা হয় । এই সময় মঙ্গল আরতি হয় , এরপর সকাল ৫-৩০ থেকে ৭ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে । সকাল ৭টায় আবার খোলা হয় , তখন দর্শন আরতী হয় , সকাল ৮টায় ভাগবত পাঠ হয় , ৮টা ৩০সে ধুপ আরতি হয় । এই সময় মন্দির খোলা থাকে । ঠিক ১১টা ৪৫সে ভোগ নিবেদন হয় আর ১২টায় ভোগ আরতি হয় । তারপর দুপুর ১ টার সময় মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয় । দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪ টে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে । ৪টের সময় আবার মন্দির খোলা হয় , এই সময় প্রথমে ধুপ আরতি হয় , তারপর ৬টার সময় সন্ধ্যা আরতী ও ৭টা ৩০শে ভাগবতগীতা পাঠ ও ৮টা ১৫ তে শয়ন আরতী হয় । সন্ধ্যে ৮ঃ৩০ শে মন্দির সেদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
আপনি যদি সব আরতী দেখতে চান তাহলে আপনাকে অন্তত ১ দিন ইস্কন মন্দিরে ঘর ভাড়া করে থাকতে হবে । কোথায় কিভাবে থাকবেন তার বিস্তারিত ভিডিওর শেষে পাবেন ।
ইস্কনের সবথেকে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে বৈদিক মন্দির ।এই মন্দিরের ভিতরে ১০ হাজার ভক্ত একসাথে দাঁড়িয়ে নাম সঙ্কীর্তন করতে পারবেন । ভিতরে হবে বিশালাকার গ্যালারী । মন্দিরটি ৬০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হচ্ছে , এর বিশালতা ভিডিওতে বোঝানো সম্ভব নয় । মন্দিরের চুড়ায় যে চক্র গুলি দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো সম্পূর্ণ সোনার তৈরি । এটা পৃথিবীর সবথেকে বড় বিষ্ণু মন্দির হতে চলেছে । এর বাইরের দিকে যে নীল রঙ দেখতে পারছেন সেটা আসলে নিল মার্বেল । মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে যে সব সাদা মার্বেলের কাজ হচ্ছে সেগুলোর অনেকটাই ভিয়েতনাম থেকে আনা । এই মন্দির তৈরির মোট খরচের অনেকটাই দিচ্ছেন ফোরড কোম্পানীর মালিক মিস্টার আলফ্রেড ফোরড ।এর কারণ জানেন ?
আসলে ফোরড কোম্পানীর মালিকের স্ত্রী একজন হিন্দু বাঙালি মেয়ে । তাঁর নাম মিসেস শরমিলা ভট্টাচার্য । ইনি নৈহাটির মেয়ে । এবং স্বামী স্ত্রী দুজনেই ইস্কনে দিক্ষিত । মন্দিরটি এখনও তৈরি হচ্ছে , আশা করা যায় ২০২২ সালের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে , তখন এর উপর আলাদা একটা লেখা দেওয়া হবে । এখন এর ভিতরে প্রবেশ করার বা ভিডিও করার কোনো অনুমতি নেই ।
যাইহোক , চন্দ্রোদয় মন্দির যে সময় বন্ধ থাকে সেই সময় আপনি অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন । ইস্কনের ভিতরে আছে গোসালা । পায়ে হেটে , টোটোয় চড়ে বা বলদে টানা গাড়িতে চেপে আপনি গোসালায় যেতে পারেন । আমরা এই গাড়িতে চড়ে হেলতে দুলতে গোসালায় গেছিলাম ,মাথাপিছু ভাড়া মাত্র ১০টাকা । চলে আসুন গোসালায় ।দেখতে পাবেন কয়েক শত গরু , কিছু ষাঁড় নিয়ে বিশালাকার এক গোয়ালঘর । এখানে আপনি ১০১ টাকার বিনিময়ে ১ টি গরুকে ১ দিনের জন্য খাওয়াতে পারেন । আর বিনেপয়সায় তাদের আদর করতে পারেন ।
তবে গোসালায় এলে অবশ্যই এখান থেকে ক্ষীর দই খাবেন । এক ভাড় ক্ষীর দইয়ের দাম মাত্র ৩০ টাকা , খেয়ে মনে হবে অমৃত খাচ্ছেন । বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে ।
এছাড়াও , ঘী , মাখন , দুধ , মধু অনেক কিছু এখানে বিক্রি হয় । ভেজাল হীন হওয়া সত্বেও দাম কম । নিসচিন্তে কিনে নিয়ে যেতে পারেন ।
গোসালা ছাড়াও ইস্কনের ভিতরেই অনেক ছোট খাটো জিনিস দেখার আছে । চন্দ্রোদয় মন্দিরের পিছনের দিকে মনোরম ফুলের বাগান , সুন্দর জলের ফোয়ারা দেখতে পাবেন । একটু এগিয়ে গেলে নামচক্র দেখতে পাবেন , এখানে ১০৮ টি পাদানি আছে , প্রত্যেকটির উপর দাঁড়িয়ে মনে মনে একবার করে মহামন্ত্র জপ করে পরের পাদানীতে যেতে হয় । এভাবে চক্রটি সম্পূর্ণ করলে আপনি ১০৮ বার জপ সম্পূর্ণ করবেন । সময় থাকলে এটা অবশ্যই ট্রাই করবেন ।
মন্দিরের কাছেই মায়াপুর ডিজিটাল তারামন্ডলে শো দেখে নিতে পারেন , সকাল ১০-১০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শো চলে । ২০ মিনিটের শো । টিকিটের দাম মাথাপিছু ৫০ টাকা ।
এবার ঘুরতে হবে ইস্কনের বাইরের মন্দির গুলো । ইস্কনের বাইরে অনেক মন্দির আছে , রাস্তার ধারে ধারেই বেশি । অল্প সময়ে বেশীরভাগ মন্দির দেখার জন্য টোটো রিজার্ভ করে নেওয়াই ভালো । তবে জেনে নি কাকা কি কি ঘুরে দেখাবেন , কাকা বলুন -
মন্দির থেকে বেড়িয়ে প্রথমে দেখতে পাবেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মিশন , ভিতরে ঢুকে বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন ।
এরপর দেখবেন সন্ত গোস্বামী গৌড়ীয় মঠ ও মন্দির । জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরনে তৈরি মন্দিরটির কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই ।
এরপর যাবেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান দেখতে । সঠিক সময়ে গেলে এখানে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ দর্শন করতে পারবেন , আর এই নিম বৃক্ষের নীচে মাতা সচির কোলে সদ্যজাত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে দেখতে পাবেন । খোলা অবস্থায় এখানে ফটো তোলা নিষেধ ।
এরপর দেখবেন শ্রীবাস অঙ্গন , বাইরের ভগবান শ্রীবিষ্ণুর মূর্তি দুটি অসাধারন , ভিতরে প্রবেশ করে বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন ।
এর পর পৌছাবেন শ্রীচৈতন্য মঠে , এখানে মন্দির , একটি সংগ্রহশালা ও সুন্দর রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ দেখতে পাবেন । এছাড়াও একটি নাট্যমন্দিরের দেওয়ালের গায়ে সুন্দর কারুকার্য করা মহাপ্রভুর জীবনী দেখতে পাবেন । এখানে একটি সুন্দর গোলাপ বাগানও দেখতে পাবেন । এখানে আপনি সাধুসঙ্গ করতে ও ভোগ নিবেদন করতে পারেন , উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে ।
এই আশ্রমের পাশেই আছে সতসঙ্গ বিহার , ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের আশ্রম । ইচ্ছা হলে দেখতে পারেন ।
এরপর যাবেন চাঁদ কাজীর সমাধী । বলা হয় সমাধীর উপরের ঐ নিম গাছটি স্বয়ং চৈতন্যদেবের হাতে রোপন করা ।
চাঁদ কাজীর সমাধীর পাশ দিয়েই যাওয়া যায় বল্লাল সেনের ঢিপি দেখতে । এই ঢিপির ইতিহাস নিয়ে আমাদের একটি বিস্তারিত ভিডিও আছে এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন ।
বল্লাল ঢিপি দেখার পর আবার উলটো পথে ফেরত গিয়ে ইস্কন ছাড়িয়ে স্বরুপগঞ্জের ঘাটের দিকে যাওয়ার পথে আরো কিছু মন্দির দেখে আসতে পারেন ।
এর মধ্যে দেখবেন - পুলিন বিহারী তোরন অর্থাৎ আরেকটি শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য মঠ । ভিতরে সুন্দর বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন ।
সুন্দর কারুকার্যে ভরা শ্রী চৈতন্য গৌড়ীয় মঠ ও বিগ্রহ দর্শন পারেন ।
এছাড়াও শ্রী গৌর নিত্যানন্দ মন্দির , শ্রী গোপিনাথ গৌড়ীয় মঠ ও আরো কয়েকটি ছোট বড় মঠ ঘুরে দেখতে পারেন ।
মনে রাখবেন কোনোভাবেই একদিনে মায়াপুর ও নবদ্বিপ ঘোরা যায় না । তাড়াহুড়ো করে দুটো দেখতে গেলে কোনোটাই দেখা হবে ।
সব কিছু দেখে আবার ইসকন মন্দিরে ফেরত যেতে পারেন । সন্ধ্যেবেলা মন্দিরের পাশে মাহুত হাতি নিয়ে আসেন , হাতিকে কলা , আইস্ক্রিম খাইয়ে খুব মজা পাবেন । এছাড়াও এই সময় বিনেপয়সায় ভোগ বিতরন করা হয় । হাতে হাতে ধরে অনেকে মিলে কৃষ্ণ নামে নাচ করতেও পারবেন । আর সন্ধ্যে ৬টায় অসাধারন সন্ধ্যে আরতী দেখতে পারেন।
এবার খাওয়ার ব্যাপারটা জেনে নিন -
ইস্কনে গিয়ে খাওয়া মানেই আমাদের কাছে প্রসাদ খাওয়া । ইস্কনে দুই রকমের খাওয়ার ব্যবস্থা আছে , একটা ৩০টাকার অন্যটা ৭০ টাকার । দুটই পেট ভরে খাওয়া হলেও ৩০টাকার খাবারে বেশী ভ্যারাইটি থাকে না , ভাত, ডাল, তরকারী , পটল ভাজা , খিচুরি । কিন্ত ৭০ টাকার খাওয়ারে অনেক কিছু থাকে - ভাত , ডাল , দু রকমের তরকারী , বিভিন্ন ভাজা , খিচুরী সাথে রুটি , চাটনী , মিস্টি অনেকসময় পায়েস । এই ৭০ টাকার খাওয়ারের কুপন কিনতে হয় এই গদা ভবনের কাছ থেকে । আর ৩০ টাকার কুপোন পাওয়া যায় গেটের কাছে । আপনি জেখানেই খান , মেঝেয় বসে সবার সাথে আনন্দ করে খেতে পারবেন ।
তবে যারা ডিম মাছ মাংস না খেয়ে একদিনও থাকতে পারেন না তাদের জন্য মন্দিরের বাইরে অনেক হোটেলের ব্যবস্থা আছে । এই হোটেল গুলোর বেশীরভাগেই থাকা ও খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে ।
ইস্কনের ভিতরে ভোগ বা প্রসাদ ছাড়া স্পেশাল কিছু ফুড পাবেন । গোবিন্দাম নামের এই রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের মিস্টি , স্ন্যক্স , ইডলি ধোসা ছাড়াও লাঞ্চ ও ডিনারের যাবতীয় ব্যবস্থা আছে , তবে দাম একটু বেশী । এই রেস্টুরেন্টের পাশেই পাবেন ঝালমুড়ি স্টল । একটু এগিয়ে গেলেই ইডলি , ধোসা , ঘুগনি , ফুচকা , আখের রস ,ডাব এত কিছুর দোকান পাবেন , তবে আমাদের ফেভারিট এই মোমোর দোকানটি , এখানকার চকোলেট মোমো খেলে মনে হবে আর কদিন ইস্কনেই থেকে যাই । রেট চার্টটা দেখে নিন । মন্দিরের বাইরে অনেক রকমের স্ট্রিট ফুড খুঁজে পাবেন , ফুচকা , ঘুগনি , রোল , চাউমিন - কোনো কিছুরই অভাব নেই ।
এবার জেনে নিন থাকবেন কোথায় ?
ইসকনের ভিতরে রাত কাটানোর অনেক সুন্দর ব্যবস্থা আছে । ঘর গুলো খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন । ভিতরে থাকাই ভালো । যারা ইসকনের লাইফটাইম সদস্য হবেন তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে এবং অনেক ভবনে রাতে থাকতে কোনো টাকা লাগে না ।
ইসকনের বাইরে অনেক ছোট বড় হোটেল আছে । বিভিন্ন রকমের ভাড়া । বেশীরভাগ হোটেলেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা পাবেন ।
কি কি কিনবেন ?
ইস্কনের ভিতরে অনেক রকমের দোকান পাবেন । জামাকাপড় , বিভিন্ন মূর্তি , ছবি , মালা , পেন , খেলনা এমন বহু রকমের জিনিস পাবেন । দেখবেন দেশী বিদেশী অনেক মানুষ এখানে দোকান দিয়েছেন । একটু দাম বেশী হলেও ভালো কোয়ালিটির জিনিস পাবেন । ইস্কনের বাইরে রাস্তার দু'ধার দিয়ে অনেক রকমের দোকান দেখতে পারবেন । এখানে দাম একটু কম পাবেন কিন্ত দর কশাকশি করে নিতে হবে ।
সাবধানতাঃ
ইস্কনে গেলে কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে নাহলে বিপদে পড়তে পারেন । প্রথমত , ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড সাথে রাখবেন । ব্যাগে কোনোরকমের আমিষ খাবার আনবেন না । আমরা দেখেছিলাম এক ব্যাক্তি তাঁর পরিবারের সাথে ইস্কন ঘুরতে এসেছিলেন অনেকটা পিকনিক করার মানসিকতা নিয়ে , ব্যাগে রুটি আর মাংস নিয়ে এসছিলেন । তাঁকে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । সব খাওয়ার দূরে ফেলে আসার পরেই ঢোকার অনুমতি পান ।
আরেকটি ব্যাপার , ইসকনের ভিতরে চন্দ্রোদয় মন্দিরের পিছনে আর সমাধি মন্দিরের পাশে দুটি ফ্রী শৌচালয় আছে । এখানে স্নান, পায়খানা , বাথরুম করতে কোনো টাকা লাগে না । খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন । প্রয়জনে ব্যবহার করবেন । ফাঁকা মাঠে দাড়িয়ে পরবেন না ।
আরেকটি ব্যাপার , একজন পুরুষ ও নারী একসাথে রিক্সা বা টোটোয় উঠলে তাদের সম্পর্ক কি সেটা না ভেবেই রিক্সাচালক বন্ধুরা আপনাকে বারংবার হোটেলে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করবে । দিদি , ভাই , বোনকে সাথে নিয়ে গেলে খুব লজ্জার সম্মুখীন হতে হয় ।
এবার জেনে নিন ফেরত আসবেন কিভাবে ?
এক - স্বরুপগঞ্জের ঘাটে ফেরত গিয়ে ঘাট পার হয়ে অটোয় চেপে কৃষ্ণ নগর স্টেশনে চলে যেতে পারেন ।
দুই - ইস্কন মন্দিরের সামনে থেকে কৃষ্ণনগর যাওয়ার বাস পাবেন , ধুবুলিয়া ঘুরে এই বাস কৃষ্ণনগর স্টেশনে যাবে ।
তিন - মায়াপুর পেট্রোল পাম্পের পাশের রাস্তা ধরে তারিনিপুর ঘাটে চলে যান । এই হল তারিনিপুরের ঘাট । এই ঘাট পার হয়ে কৃষ্ণনগর যাওয়ার অটো পেয়ে যাবেন ।
No comments: