ভগিনী নিবেদিতার এই বানীগুলি পড়ুন
• মনের সকল অংশকে একই লক্ষ্যে একাগ্র করাে। দিবারাত্রি তােমার একমাত্র চিন্তা হােক সেই কর্ম যা সম্পাদন করবে বলে হাত লাগিয়েছে।-ত্রুটিহীন সেবাই তােমার অনুক্ষণের ধ্যান জ্ঞান হােক। তাহলেই নতুন যুগের নতুন ঋষির অভ্যুদয় ঘটবে, সর্বত্র হাটে বাজারে ক্ষেতে, খামারে, পৌরপ্রতিষ্ঠানে ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি মনন করে, চিন্তা ভাবনা করে নিজের উন্নয়নের পথ খুঁজে নিতে হয়। সেটিকে সক্রিয়তায় আনতে হয়, অতীতের ভুল ভ্রান্তি থেকে সংশােধনের শিক্ষা নিয়ে।
• নিজের জাতীয় ভাবকে বিশ্বভাবের অংশরূপে আত্মগত করতে হবে। সেই জন্য প্রয়ােজন হলে ভাঙ্গতে হবে বাহ্যিক আচারের বন্ধন। কিন্তু তা যেন ব্যক্তিগত স্বার্থে না করা হয়।-বিশ্বসেবাই প্রকৃত স্বদেশসেবা।
• শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে, তার লক্ষ্য শুধু নিজের উন্নতি নয়। ব্যক্তি, দেশ ও ধর্মের প্রতি দৃষ্টি রেখে যে কল্যাণময় শিক্ষা, তা-ই তাকে যথার্থ মানুষ রূপে গড়ে দেশ সেবায় নিযুক্ত করে। এই দেশপ্রেম যখন হৃদয়ে দৃঢ় হয়ে আদর্শ ও সংস্কৃতিতে উন্নত মস্তকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় তখনই অপরাপর জাতির মহত্ত্ব ও উচ্চ আদর্শের মর্ম গ্রহণ করা সম্ভব হয়। তা না হলে আন্তর্জাতিকতার দোহাই দিয়ে অপর জাতির অনুকরণ চরিত্রকে নিকৃষ্টই করে তােলে। একবার আত্মনিবেদনে সক্রিয় হলে, হৃদয় ও মনের সব দিলেও মনে হয় যেন কিছুই দেওয়া হলাে না। সমর্পণই যেখানে প্রকৃত লক্ষ্য, সেখানে দেওয়ার পরিমাণ” বিচারেব বিষয় হতে পারে না।
• এগিয়ে চলাে। তােমার ভাগ্যে যা (র্মগত) ভার বহনের দায়িত্ব পড়েছে তা মানুষের মত বহন করাে। তােমার হাতের সামনে যে কাজ এসে পড়েছে, তা পূর্ণশক্তির সঙ্গে সম্পন্ন করাে। ভয় পেয়ে কিছু চেয়াে না। কোনাে (স্বার্থ) পরিকল্পনা করাে না। পরমের ইচ্ছাকে তােমার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে দাও, যেমন একটি খােলের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের জল বয়ে যায় ঠিক তেমনি করে। পরাজয় থেকে পালিয়ে যেয়াে না, হতাশাকে আলিঙ্গন করাে। সুখ ও আরাম থেকে ব্যথা বেদনা (মূলবােধে) পৃথক নয়। -ব্রহ্মচর্যের মধ্যেই সমস্ত শক্তি ও মহত্ব প্রচ্ছন্ন রয়েছে।
• ঈশ্বরের জন্য ব্যাকুলতাই জীবনের সামগ্রিক অর্থ। আমার সেই প্রিয়তমই এই বাতায়নের মধ্য দিয়ে দেখছেন, দ্বারে ডাক দিচ্ছেন। তার কোনাে অভাব নেই, তবুও তিনি মানুষের অভাবের সাজ গ্রহণ করে আসেন, যাতে তার সেবায় সুযােগ লাভ করি। তঁার ক্ষুধা নেই, তবুও তিনি প্রার্থী হয়ে আসেন, যাতে তাকে দিতে পারি। তিনি সাক্ষাৎ করতে আসেন, যাতে তাকে আসন দিতে পারি। আমার যা কিছু সবই যে তার। একান্তভাবেই তঁার। আমার “আমিত্ব” কে সম্পূর্ণ। লােপ করে তিনি সেইখানে প্রকাশিত হােন—এই প্রার্থনা।
• এমন জীবনের ধারণা করাে, যেখানে (আনবিক মর্যাদায়) সকলে,সমান স্বার্থে সম-প্রয়ােজনে ও সহযােগিতায় কর্তব্যবােধে উদ্বুদ্ধ। যদি জাতীয় জীবন ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহের মূল্যায়নের কোনাে চূড়ান্ত মানদণ্ড থাকে, তাহলে সেটি হলাে নৈতিকতা। ধন-সম্পদ, শিল্পপ্রসার বা ভােগ সুখ-উপকরণের প্রাচুর্যও সেই মানদণ্ড হতে পারে যে সংগ্রামকে ভালােবাসে, সে বীর, কিন্তু সেই সংগ্রামে যেন নীচতা ও তিক্ততা না থাকে, (সত্যনিষ্ঠ) সংগ্রামের আহ্বান এলে যেন নিদ্রাভিভূত থেকো না। যদি আমরা আর কিছু শিখতে নাও পারি, আমরা যেন নিজেকে বিলিয়ে দিতে, ত্যাগ করতে ও সেবা করতে শিখি। অন্তর থেকে আমরা যেন দেনা-পাওনার শেষ রেশটুকুও নির্মূল করতে পারি।
• আত্মানুশীলনের জন্যই নয়, পরন্তু (মানব কল্যাণের) আদর্শের জন্য আমাদের ভালােমন্দ সর্বস্ব নিয়ে নিবেদন করতে পারি। প্রেমের জন্যই প্রেম। কর্মের জন্যই কর্ম, সনাতন আধ্যাত্মিক এই হলাে শ্রেষ্ঠ বার্তা। কে কোনাে বিশেষ কর্মধারা গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে কিছু আসে যায় । তিনিই প্রকৃত বীর যিনি যথােপযুক্ত কাজের দ্বারা তথা নিজেকে নিবেদনের মাধ্যমে ঐকান্তিক দেশভক্তির পরিচয় দেন।
• যদি কোনাে জাতীয় একটি বিশেষ শ্রেণি, (নিজেদের স্বার্থ) বিশেষ কোনাে ভাবধারা থেকে সর্বপ্রকার মানসিক পুষ্টি সঞ্চয় করে এবং অন্যান্য শ্রেণি অন্য ভাবধারায় গড়ে ওঠে, তবে সেই জাতির অন্তর্লোকে যে ঐক্য বিদ্যমান, সেটিকে বৃহত্তর জীবনে কোথাও কার্যকরী করা যায় না। প্রয়ােজন হলাে দেশগতভাবে সকলের মধ্যে সর্বজনীন ঐক্যবােধের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে সমস্ত জাতির জন্য শিক্ষা ।
• যারাই ন্যায়ের পথ রােধ করে দাঁড়ায়, দারুণ আঘাত তাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী। ইতিহাসে দেখা যায়, এমন এক একটা সময় আসে যখন নির্মম নিষ্ঠুর শক্তিমানরাও কম্পিত হয়ে ওঠে, ঈশ্বরের করুণার জন্য প্রার্থনায় চিৎকার করে। কিন্তু তারা তা লাভ করতে পারছে না কিছুতেই।
• স্বার্থশূন্য মানুষ বজ্রতুল্য। তাই সেই স্বার্থহীনতার সাধনা করতে হবে যাতে দিব্যয়িত ব্ৰজের মত হয়ে ওঠা যায়। কীভাবে সাধনা করতে হবে সেটি প্রশ্ন নয়। তার জন্য হিসাব-নিকাশও প্রয়ােজন নেই। প্রথমে প্রয়ােজন শুধু ‘অহং” সমাপন। যখন কোনাে মানুষ মানবকল্যাণে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিবেদন করে সে দেবতার হাতের বজ্রের মত শক্তিসম্পন্ন হয়।
• যে শিক্ষা চিত্তবৃত্তির উন্মেষ সাধন করতে গিয়ে নম্রতা ও কমনীয়তা বিনষ্ট করে তা প্রকৃত শিক্ষা নয়।-শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হলাে মানসিক ও আধ্যাত্মিক বৃত্তিগুলির পরস্পরের সহযােগিতায় বিকাশ সাধন।
Quotes by Sister Nivedita in Bengali
No comments: