• উচ্ছৃঙ্খলা দারিদ্র্যের বাহন। সাংসারিক জীবনে বা ধর্মীয় জীবনে যখনই অনুভব করবে, মনের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলা বিস্তার লাভ করছে তখনই বুঝবে (চেতনার) দারিদ্র্য তােমাকে গ্রাস করছে।
• যে কাজের দ্বারা তুমি নিজে তাপগ্রস্ত হও, অথবা তােমার সমাজকে তাপগ্রস্ত করাে, তা-ই পাপ কাজ। সমাজে থেকেই সাধনা করতে হবে। যে অবস্থায় কোনাে পাপ তােমাকে স্পর্শ করতে পারবে না,তখনই হরি তােমাদের কোলে নেবেন, তার আগে নেবেন না।
• লােকেরা দামড়ি (অর্থ), চামড়ি (দেহভােগ) পেট (আহার) এই তিন বিষয় নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত। এই তিনের আসক্তি যার যতটুকু কমেছে, তার ততটুকু ভক্তির উদয় হয়েছে। এই আসক্তি একেবারে নির্মূল না হলে প্রকৃত ভক্তির উদয় হতে পারে না।
• গভীর রাতে নির্জন স্থানে “পূর্ণভাবে নিশ্চিত" হতে চেষ্টা করে দেখাে, তােমার মন কোনােদিকে যায়। তােমার মন পুনঃ পুনঃ নিবারণ করা সত্ত্বেও যেই দিকে যাবে তা-ই তােমার কর্ম। সেই সময় চিন্তা করে দেখাে, তুমি সমস্ত দিন যে সব কাজ করেছে তা সত্ত্বপ্রধান, কি রজঃপ্রধান, কি তমঃপ্রধান। তােমার অধিকাংশ কাজ যে গুণের তুমি সেই গুণবিশিষ্ট । “পূর্ণভাবে নিশ্চিন্ত" হতে চেষ্টা করার উদ্দেশ্য কী? যেদিন পূর্ণভাবে নিশ্চিন্ত হতে পারবে, সেদিনই এর উত্তর পাবে। বলে দেওয়ার প্রয়ােজন নেই, বলে দিলে তা কল্পনাতে পরিণত হয়, প্রকৃত তত্ত্ব অনুভূত হয় না।
• ভােগ ভিন্ন প্রারব্ধকর্ম ক্ষয় হয় না।
• শাস্ত্রজ্ঞান শিক্ষা দিতে পারে, কিন্তু শাস্ত্র পাঠে “বিজ্ঞান” লাভ হয় না । অর্থাৎ যার প্রত্যক্ষ অনুভূতি হয়েছে তিনি-ভিন্ন শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ ও মর্ম অন্যে বুঝতে পারে না। নিজে যা অনুভব করতে পারােনি তা কাউকে বলাে না।
• সূর্যোদয়ে যেমন অন্ধকার থাকে না, গৃহস্থ জাগ্রত হলে যেমন চোর পলায়ন করে, তেমনি পুনঃ পুনঃ ধর্মালােচনা করলে নিকৃষ্ট বৃত্তির কার্যসমূহ দিন দিন পলায়ন করবে, দেহ একটি দেবমন্দির হবে, ব্রহ্মশক্তি তােমার হৃদয়কে অধিকার করবে এবং তুমি (ব্রহ্মজ্ঞানে) ব্রাহ্মণত্ব লাভ করবে।
• বাক্যবান, বিত্তবিচ্ছেদ বান, বন্ধুবিচ্ছেদ বান, এই তিনটি বান যে সহ্য করতে পারে, সে মৃত্যুকে জয় করতে পারে।
• বাসনা ত্যাগ হলেই জীব অমরত্ব (বােধ) প্রাপ্ত হয়, (দেহ) ঘটের নাশই মৃত্যু। যাঁর দেহে আত্মবুদ্ধি নেই, তার আবার মৃত্যু হবে কী ভাবে? (অহং) অভিমান না থাকাতে কোনাে কাজই তিনি তার নিজের কর্তৃত্বে হয়েছে বলে বােধ করেন না। এই অবস্থায় তিনি সংসারের সব কাজই করতে থাকেন, অথচ কিছুই করেন না। জীবন যখনই বাসনাশূন্য হয়, তখনই তাঁর “জীবত্ব” শেষ হয়ে যায় এবং তিনি “শিবত্ব" লাভ করেন অর্থাৎ তার জীবভাব ব্রহ্মসত্তায় বিলীন হয়ে যায়।
• সাময়িক ভ্রমবশতঃ তুমি মনে করতে পারাে, তােমার বৈরাগ্য জন্মেছে, কিন্তু ভেতরে যে তােমার অন্ধতা প্রযুক্ত বাসনা আছে, তুমি তা দেখতে পাও না। বাসনা থাকতে (গৃহ ছেড়ে) গাছতলায় গেলেও সন্ন্যাস হবে না। সন্ন্যাস মনের অবস্থা। তা যার হয়নি তার পাহাড়ে গেলেও হবে না। যার হওয়ার তার:...সব জায়গাতেই হয়েছে, হবে। তার স্থান পরিবর্তনের প্রয়ােজন নেই।..সংসার অতিক্রম করতে হবে বনে যেতে হয় না। “কার্য পরিত্যাগ” ও “কার্য করা” উভয়কেই যে একই অবস্থা মনে করে সে-ই সন্ন্যাসী (আত্মজ্ঞানী)।
• জ্ঞানের সাথে ভক্তির যােগ করে দিয়ে তােমরা মনিকাঞ্চন হও। শ্রদ্ধা হবে তােমাদের আশ্রয়, তােমাদের বান্ধব ; শ্রদ্ধাই হবে তােমাদের পাথেয়।
No comments: