পঞ্চতন্ত্রের নীতিকথা
• একজন মানী লােক অপর মানী লােকের অপমান দেখলে খুশি হাতে পারে না ।
• কাজ শুরু করার আগে ভেবে নেওয়া উচিত। শুরু করলে অবশ্যই শেষ করতে হয় ।
• চোখের সামনে কুকাজ ঘটতে দেখেও যে মধুর বাক্যে ভােলে তার পরিনতি খারাপ হয় ।
• জ্ঞানীর লক্ষণ হল, সে প্রশ্ন করে, মন দিয়ে উত্তর শােনে এবং তা মনে রাখে।
• নিশ্চিত ছেড়ে অনিশ্চিতের পিছনে ছােটা উচিত নয়, তাতে দুটোই হারায়।
• দুষ্ট লােকের স্বভাবই হল, অন্যের অনিষ্ট করা। প্রয়ােজনে তারা নিজের নাকও কেটে ফেলতে রাজি।
• ভালােবাসলে মানুষ গােপন কথা বলে ও জানতে চায়, খায় ও খাওয়ায়, দেয় এবং নেয়।
• সর্বস্ব চলে গেলে যখন প্রাণ পর্যন্ত যাবার উপক্রম তখন শত্রুর কাছে নত হয়ে ধন-প্রাণ রক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
• যে খাবার খাওয়ার যােগ্য, সহজপাচ্য এবং বলবর্ধক তাহাই খাদ্য।
• সম্পূর্ণ না জেনে, না দেখে কাউকে গুণী বলে ঘােষণা করা বুদ্ধির দুর্বলতা।
• শত্রুকে বিন্দুমাত্র সুযােগ দিতে নেই। কারণ সে তাকেই কাজে লাগিয়ে তােমার বিনাশ ঘটাবে।
• একবার যে বিশ্বাসের অমর্যাদা করে তাকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করলে পরিণামে আপশােস করতে হয়।
• সুসময়ে বন্ধুর অভাব হয় না। কিন্তু বিপদে যে বন্ধু হয় সে-ই প্রকৃত বন্ধু। প্রকৃত বন্ধুর বিত্ত বাড়লেও চিত্তের বিকার হয় না।
• অসাবধানী, অসৎ, লােভী, অলস, অস্থির, বােকা—এমন শত্রুকে সহজেই শেষ করা যায়।
• যে কাজ ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে মঙ্গলকর তাহাই পুণ্য বা ধর্ম। আর যে কাজ ব্যক্তি কিংবা সমাজের পক্ষে অহিতকর তাহাই পাপ বা অধর্ম।
• কিছু লােক ভালাে কথা বলতে পারেন। কিছু লােক ভালাে কথা মনে আসলেও মুখে তেমন বলতে পারেন না। ব্যতিক্রমী মানুষেরা দুটোতেই সমান দক্ষ।
• সব কাজই ভেবেচিন্তে ও ধীরে-সুস্থে করতে হয়। কেবল ধর্মকাজ করতে হয় যথাসম্ভব দ্রুত।
• বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বলবান, বুদ্ধি না থাকলে বিদ্যা ব্যর্থ হয়। যে বুদ্ধিহীন সে দুর্বল। শত্রু ও ব্যাধি শুরুতেই নির্মূল করা উচিত। তা না করলে সে তােমাকে ধ্বংস করবে।
• বিচক্ষণ ব্যক্তিরা একবার দেখেই মানুষ চিনতে পারেন। কেবল কথাই নয়, চোখ-মুখের ভঙ্গি ও ভাব, ইশারা-ইঙ্গিত প্রভৃতি দেখেও মানুষ চেনা যায়।
• যে ব্যক্তি অকারণে প্রশংসা করে, অকারণে হাসে—তার সঙ্গে সাবধানে মিশতে হয়।
• আনন্দে, শশাকে কিংবা ভয়ে—ঘটনাটির গভীরে ঢুকে অনুসন্ধান করতে হয়, তাহলে পরিতাপ করতে হয় না।
• বুদ্ধিমান ব্যক্তি কথা বলেন ভেবেচিন্তে। কিছু কথা চেপে রাখতে হয় স্ত্রীর কাছে, কিছু কথা বন্ধুদের কাছে, কিছু কথা ছেলেমেয়েদের কাছে, কিছু কথা আত্মীয়-স্বজনের কাছে।
• রাজার কাছাকাছি মানুষদের যেমন ভৃত্য, দারােয়ান, চালক— সকলকেই মর্যাদা দিতে হয়।
• উপদেশ দিয়ে স্বভাব বদলানাে অসম্ভব।
• জাত-শত্রুতা বা স্বাভাবিক শত্রুতা যাবার নয়। যেমন তৃণভােজী ও নখী, জল ও আগুন, ধনী ও দরিদ্র, নামী ও অনামী, সুরূপ ও কুরূপ, অধার্মিক ও ধার্মিক, সুজন ও দুর্জন, কৃপণ ও দাতা, দেবতা ও দৈত্য, মহৎ ও নীচ।
• যারা হয়কে নয় কিংবা নয়কে হয় করে তাদের সর্বদা এড়িয়ে চলা উচিত।
• নিজ বুদ্ধি, যুক্তি, বিচার ক্ষমতা এবং বিশ্বস্ত বন্ধুর পরামর্শ নিয়ে কাজ করলে ঠকার ভয় কম।
• বুদ্ধিমান ব্যক্তি অপর ব্যক্তিসত্তাকে সহজেই চিনে নেয় এবং তাকে বশ করে ফেলে।
• ভালাে বন্ধু, ভালাে চিকিৎসক এবং ভালাে শিক্ষক—পাওয়া বেশ কঠিন।
• যে-কোনাে আলােচনা শুনে প্রত্যেকের মতামত জেনে তারপর নিজের মত প্রকাশ করা উচিত। ঘটনা বা প্রস্তাব শােনা মাত্র নিজের অভিমত প্রকাশ করা বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়।
• অজানা, অচেনা মানুষকে আশ্রয় দেবার আগে দুবার ভাবা উচিত।
• মানুষের ভাবনাচিন্তা তার ভাগ্যকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যা ভাবি তা-ই করি, সেই কর্মফলই আমাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করে।
• সমাজের চোখে যা কিছু দোষণীয় তা যদি কারও চরিত্রে বর্তমান থাকে, সে কথা অতি বিশ্বস্তজনকেও বলা উচিত নয়।
No comments: