একই জেলার এই দুই উপত্যকার ঐতিহাসিক পটভূমিও দুরকমের। অতীতে লাহুল কখনও ছিল লাদাখ রাজাদের দখলে, কখনওবা ছিল কুলুর রাজাদের শাসনে। লাদাখ রাজাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার সুযােগ নিয়ে ১৮৪০-এ কুলুর মহারাজা রণজিৎ সিংহ দখল করে লাহুল। ১৮৪৬-এ ব্রিটিশ রাজত্বের অংশ হয়। সেসময় কাংড়া জেলার কুলু সাব-ডিভিসনের একটি অংশ ছিল লাহুল। অপরদিকে স্পিতিও ১৮৪৬-এ ব্রিটিশ রাজত্বের অংশ হয়, যা তখন ছিল লাদাখের অংশ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিন্তু সরাসরি নিজেদের আইন মেনে শাসন করেনি এই অঞ্চল। স্থানীয় রাজাদের মাধ্যমে শাসন করত এই অঞ্চল।
১৯৪১-এ লাহুল ও স্পিতি নিয়ে তৈরি হয় নতুন সাব-ডিভিসন। ১৯৬২-তে জন্ম নেয় নতুন জেলা লাহুল-ম্পিতি। প্রায় চোদ্দ হাজার বর্গ কিমি আয়তনের এই জেলার জনসংখ্যা মাত্র ৩৫ হাজার। ৫০০-র বেশি গ্রাম থাকলেও বসবাস আছে ২৬৫টি গ্রামে। এই জেলাতেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ গ্রাম কিবের। ইন্দো-তিব্বতি সীমান্তের লাহুল ও স্পিতি উপত্যকার প্রবেশপথ হলাে রােটাং পাস। তিব্বতি ভাষায় রােটাং অর্থ মৃত্যু। এক সময় এখানে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তার হিসেব নেই। এই পথে অতীতে বাণিজ্য হতাে স্পিতি, দ্রাস, কারগিল, লাদাখ হয়ে মধ্য এশিয়ায়। দুর্গম পথ, প্রতিকূল আবহাওয়া, তবুও পথের আকর্ষণে মানুষ ছুটে চলেছেন পথ কোথাও সংকীর্ণ, বন্ধুর, চড়াই, রয়েছে ভয়ঙ্কর হিমবাহ, চন্দ্র আর ভাগা এই দুই নদী।
চোখে পড়ে বৌদ্ধ মনাষ্ট্রি, তার চিত্রসম্ভার , শিল্পকর্ম। স্থানীয় মানুষেরা সহজ, সরল, অতিথিপরায়ণ।
এই জেলা ভ্রমণ করা যায় দু’দিক থেকে। সিমলা থেকে শুরু করে রামপুর-সারাহানসাংলা-কল্পানাকো ঘুরে নিয়ে এই জেলার কাজা-কুনজুম-কেলং দেখে শেষ করা যায়
মানালিতে অথবা মানালি থেকে শুরু করে কেলং-কাজা-কল্লা-সাংলা-সারাহান-রামপুর হয়ে শেষ করা যায় সিমলায়।
লাহুল-স্পিতির বিভিন্ন থানা; কেলং, Ph; (01900) 222223;
কাজা, Ph: (01906) 222253; উদয়পুর, Ph: (01909) 222210..
স্পিতি নদীর তীরে ৩০০০ মিটার উঁচুতে পাহাড়ি শহর টাবাে। চারদিকে ঘিরে আছে গগনস্পর্শী পাহাড়ের সারি। প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন এই গ্রাম। এক সময় বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে এখানে এসেছিলেন গুরু পদ্মসম্ভবনা। ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে তৈরি হয় তাকে গুম্ফা।
বৌদ্ধদের কাছে এই গুহার মাহাত্ম্য অপরিসীম। কাশ্মীর থেকে শিল্পীরা এখানে এসে ফুটিয়ে তােলেন নানান চিত্রকলা। অসাধারণ তার শিল্পশৈলী। সেই কারণেই তাবােকে বলা হয় হিমালয়ের অজন্তা। ৩০০০ বর্গ মিটার অঞ্চল জুড়ে এই গুম্ফা। রয়েছে গুম্ফা স্তুপ থঙ্কাস, নানান ভঙ্গিতে বুদ্ধের মূর্তি, প্রাচীন পুঁথি, বাদ্যযন্ত্র। দেওয়ালে জাতক অবলম্বনে বুদ্ধের জীবন কথা। গর্ভগৃহে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের বিশাল মূর্তি। বর্তমানে UNESco একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘােষিত করেছে। এছাড়া তাবাের কিছু গুহাতে রয়েছে প্রাচীন চিত্রকলা। স্থানীয় ভাষায় তাদের বলা হয় দুওয়াং।
নাকো থেকে কাজার পথে ৬৪ কিমি দূরত্বে টাবাে। থাকার জন্যে রয়েছে
(STD Code 01906) Dewachen Retraet, Ph: 223301, 9459883443, MAP: 6100/- ;
Hotel Tow Dhey, Ph: 9418271129, 9418537574, 1500/-;Maitrey H/
Stay, Near Monastery, Ph: 223329, 9418981317; Millenium (Monestry)
G/House, Ph: 223315/33; Tashi Khangsar, Ph: 223346/77, 1200/
টাবাে থেকে স্পিতি নদীর পাশ দিয়ে কাজার পথে ২৫ কিমি এগিয়ে ডানদিকে আলাদা পথে আরও ৭ কিমি গেলে ধাংকার গুম্ফা। ৩৮৭০ মিটার উচ্চতায় এই জায়গায় এক সময় ছিল স্থানীয় রাজাদের দুর্গ। স্থান মাহাত্ম্যে বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এই দুর্গের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। আজ পড়ে আছে শুধুই, ধ্বংসাবশেষ। সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীতে তৈরি গুম্ফাটিও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। লা-ও সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের এই গুম্ফাটিকে বলা হয় লা-ও-পা গুম্ফা। বহুতল এই গুম্ফায় রয়েছে পাঁচটি হলঘর। জুখাং হলঘরটিতে রয়েছে বজ্ৰধারার বিশাল রৌপ্য মূর্তি। গুম্ফা থেকে আড়াই কিমি দূরে ৩৫০০ফুট উচ্চতায় রয়েছে ছােট্ট একটি লেক। পীনপার্বতী নদীর তীরে কুংবি গুম্ফাটিও দেখার মতাে। ধাংকারে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে উৎসাহীরা লেকের ধারে তাবু খাটিয়ে থাকতে পারে।
কাজা থেকে ঘুরে আসা যায় ২৯ কিমি দূরে পীন নদীর দুধারে পর্বতমালার ঢালে পীন উপত্যকা। রুক্ষ, সবুজহীন স্পিতি জেলায় পীন ভ্যালি জুড়ে সবুজের চোখ জুড়ানাে রূপ দেখে মুগ্ধ হতে হয়। বিদেশী পর্যটকদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় এই পীন ভ্যালি। বলা হয় "Land of ॥bex and Snow Leopards". পাহাড় থেকে নেমেছে কুংরি গ্লেসিয়ার। কাজা থেকে পীন ভ্যালির পথে আত্তারগু-তে পীন নদী মিশেছে স্পিতির সাথে।
No comments: