☞ পৃথিবী ফেরত চেয়েছেন ঈশ্বর।
☞ কি হলো এত পরমাণু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা বানিয়ে আমেরিকার বি-স্টেলথ ( B-2 Spirit ) বোমারু বিমান নাকি আলপিনের ডগায় বোমা ফেলতে পারে কয়েক কিলোমিটার উঁচু থেকে, রাশিয়ান S-400 Triumph মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, নাকি পৃথিবীকে কয়েক চক্কর কেটে ফেলার ক্ষমতা ধরে। AK107 ( Russian 5.45 ✘39mm. assault rifle) রাইফেল নাকি আস্ত ট্যাংক উড়িয়ে দেয় এক নিমেষে।
☞ মানুষ মারার কত আয়োজন।
☞ মনে আছে, সিরিয়ার সেই ৩ বছরের ছেলেটির কথা ? বোমায় ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে মরে যাবার আগে যে বলেছিল, "আমি ঈশ্বরকে সব বলে দেব।"
☞ সে হয়তো ঈশ্বরকে সব ব'লে দিয়েছে।
☞ হয়তো বলে দিয়েছে,
আমাদের পৈশাচিকতার কথা, লোভের কথা, অসভ্যতার কথা, নির্যাতনের কথা।
☞ আমরা মানুষ মেরেছি হাজারে হাজারে, একে অপরকে ধ্বংস করার জন্য মারণাস্ত্র বানিয়েছি লক্ষ - কোটি। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে গড়ে তুলেছি গগনচুম্বী অট্টালিকা। মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ানোর জন্য তৈরি করেছি নানান গোপন অস্ত্র।
☞ সুইডেনের ইন্টারন্যাশনাল পীস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে ২০১৮ সালে পৃথিবীতে কেবলমাত্র যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য খরচ হয়েছে ১.৮২২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
☞ সে হয়তো ঈশ্বরকে সব বলে দিয়েছে।
☞ বলেছে সেই পাখিটির কথা, যে আর আকাশে ওড়ে না। বলেছে সেই আকাশের কথা, যা একদিন নীল ছিল। বলেছে সেই বাতাসের কথা, যা একদিন নির্মল ছিল। বলেছে সেই পৃথিবীর কথা, যা একদিন সবার ছিল।
☞ এই সবার পৃথিবীকে আমরা ভাগ করেছি ইচ্ছেমতো।
☞ ধর্মের নামে, দেশের নামে, ভাষার নামে মানুষকে দূরে সরিয়েছি।
☞ চামড়ার রং দিয়ে, গণতন্ত্রের নাম দিয়ে, রাজনৈতিক স্বার্থে স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে, কেটে টুকরো টুকরো করেছি নিজেদের।
☞ সাগর পাড়ে পরে থাকা আ্যালান কুর্দি, কাঁটাতারে ঝুলতে থাকা ফেলানি হয়তো সব বলে দিয়েছে ঈশ্বরকে।
☞ ঈশ্বর তার পৃথিবী ফেরত চেয়েছেন এবার।
☞ তিনি হয়তো শুনেছেন সব অভিযোগ। হয়তো শুনেছেন প্রকৃতির করুণ আর্তনাদ। শুনেছেন সেই পাখিটির কান্না।
☞ এটাই হয়তো ঈশ্বরের মার, কিংবা প্রকৃতির প্রতিশোধ। বৈভবে মোড়া দুবাই - এর ৮২৮ মিটার উঁচু বুর্জ খলিফা নাকি খাঁ খাঁ করছে। সোনা আর পেট্রো ডলারে মুড়ে রাখা অহংকার থরথর করে মৃত্যুভয়ে কাঁপছে।
☞ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা ভাইরাসের ভয়ে প্রবল পরাক্রমশালীরা অসহায়ের মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন কোটের কলার ফাটা বিজ্ঞানীর দিকে, অথবা রাতজাগা ক্লান্ত অবসন্ন, কিন্তু হার না মানা জেদি ডাক্তার আর নার্সের দিকে।
☞ চরম উন্নাসিকতায় যাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না, আজ সেই সাফাইকর্মীদের পুষ্পবৃষ্টি আর শঙ্খধ্বনিতে হচ্ছে আবাহন।
☞ তবে এ যুদ্ধ কি কেবল অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে ? বোধহয় নয়। লকডাউনে খাবারের অভাবে গঙ্গায় পাঁচ সন্তানকে মায়ের বিসর্জন। এক পেট ক্ষিদে নিয়ে, এক বুক কষ্ট নিয়ে, নিজের এক রাশ না পাওয়ার সাম্রাজ্যে ফিরতে চাওয়া, একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু। কোমল রক্তাক্ত পা'য়ে ১১ বছরের জামলোর মৃত্যু। সন্তানের মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে না পারার অব্যক্ত যন্ত্রনায় কর্মহীন পিতার আত্মহত্যা। এইসব কিছুর বিরুদ্ধে আমরা কি প্রতিদিন নিজেদের মনের ভিতরে এক অদৃশ্য লড়াই করছি না ?
☞ একদিন হয়তো সব ঠিক হবে, কিন্তু আমরা কি সত্যিই মানুষ হবো ?
☞ এই অন্তহীন প্রশ্ন ভবিষ্যতের জন্য রেখে আজ অন্তত বাঁচার স্বপ্ন দেখি।
☞ আমরা রাষ্ট্রের আহ্বানে সম্মিলিতভাবে থালাবাসন না বাজিয়ে, সম্মিলিতভাবে মোমবাতি না জ্বালিয়ে, আতসবাজি না পুড়িয়ে, ফানুস না উড়িয়ে। নিজেদের অন্তরের আহ্বানে সম্মিলিতভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।
☞ এ যাত্রায় যদি বেঁচে থাকি, একটি সবুজের বীজ বপন করবো। তাকে সন্তানস্নেহে লালন করে মহীরুহে পরিণত করবো। একটি পাখীর শিকল কেটে উড়তে দেবো। আর নিজের সন্তানকে তথাকথিত শিক্ষিত, ধনী ও স্বার্থপর নাগরিক হওয়ার নয়, দেবো প্রকৃত মানুষ ( মান ও হুঁস ) হয়ে ওঠার শিক্ষা।
সংগৃহীত। লিখেছেন সুব্রত উকিল মহাশয় ।
মারণ ভাইরাস কোরোনা আমাদের কি কি শিক্ষা দিল ? - এই শিক্ষা ভুলবার নয় ।
Reviewed by Wisdom Apps
on
June 16, 2020
Rating:
No comments: