কোরোনা ভাইরাস সম্বন্ধে এপর্যন্ত অনেক কিছুই আপনি জেনেছেন এবং পড়েছেন , কিন্ত এই লেখাটি পড়লে আপনার ভয় পালাবে , আত্মবিশ্বাস বাড়বে আর নিজের ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদেরকে জানাবেন । আসুন, কোরোনাকে ভয় না পেয়ে একসাথে মোকাবিলা করা যাক ।
প্রথমে একটা ব্যাপার জানুন - কোরোনা একটা ভাইরাস , কোনো ব্যাকটিরিয়া না । যারা জানেন না তাদের জানাই , ভাইরাস কিন্ত জীবন্ত নয় , আবার মৃতও নয় । ভাইরাস (Virus)হল একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে । জীবিত কোষ না পেলে এরা জড় পদার্থের মত আচরন করে এবং সময় বিশেষে নস্ট হয়ে যায় ।
তাহলে এটা নিশ্চিত যে এই ভাইরাসটি যতক্ষন না আমাদের কারোর শরীরে প্রবেশ করছে ততক্ষন চিন্তা নেই ।
এবার প্রশ্ন হল এরা আমার শরীরে প্রবেশ করবে কিভাবে ?
দেখুন , কোরোনা বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে দিয়েই প্রবেশ করতে পারে । এ ব্যাপারে আপনারা অনেক কিছু শুনেছেন । এখন একটা উদাহরন দিই । ধরুন আপনি একটা হোটেলে খেতে গেছেন , আপনি জানেন না যে সেখানে কিছুক্ষন আগে এক কোরোনা রুগী খাওয়ার খেয়েছে । সে হাঁচি দিয়েছে , মুখ খুলে কেশেছে , আর যে টেবিলে বসে খেয়েছে সেটায় এটোকাঁটা ছড়িয়েছে , এমনকি একটি স্টিলের গ্লাসে সে মুখ লাগিয়ে জলও খেয়েছে , তাহলে কিসে কিসে কোরোনা ভাইরাস লেগে থাকতে পারে ?
দা ইংল্যান্ড জার্নাল ওফ মেডিসিন এর লেখা অনুযায়ী - করোনা ভাইরাস কার্ডবোর্ডের গায়ে দিব্যি ২৪ ঘন্টা আক্টিভ থাকতে পারে , তবে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল স্টিলের ও প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে ৭২ ঘন্টা আক্টিভ থাকে করোনা । ভালো ব্যাপার হল - তামার পাত্রে কোরোনা ৪ (চার) ঘন্টার বেশী টিকে থাকে না , নস্ট হয়ে যায় । তাহলে এটা বুঝুন -কাপড়ের বা প্লাস্টিকের মাস্ক পড়া যেমন জরুরী তেমনই মাস্ক পরিস্কার রাখাটাও জরুরী , আপনার মাস্কে লেগে থাকা অনুজীব বায়ুর থেকে বেশী সময় আক্টিভ থাকবে । তাই যতটা পারেন , হাত , মুখ , মাস্ক সব ধুয়ে সাফ রাখুন । আর বাড়িতে তামার পাত্র থাকলে আজ থেকেই ব্যাবহার শুরু করুন । স্টিলের পাত্র ও প্লাস্টিকের বোতল যত কম ব্যবহার করেন ততই ভালো । এখন প্রায় সব বাড়িতেই জারে করে বাইরের জল কিনে খাওয়া হয় । সেই জলের জার করোনা মুক্ত কিনা তা তো আর পরীক্ষা করা সম্ভব নয় তাই বাড়িতে আনা জল তামার পাত্রে ভরে কয়েক ঘন্টা রেখে খান । এতে ক্ষতি তো হবেই না বরং শরীরের বেশ কিছুটা উন্নতি হবে ।
আর একটা ব্যাপার হল , কোরোনার বায়ুতে উড়ে বেড়ানোর সময়কাল ৩ ঘন্টা , অর্থাৎ কোরোনা সংক্রমিত বায়ুকে তিন ঘন্টার বেশী সময় চুপচাপ রেখে দিলে সেখানে করোনা আর আক্টিভ থাকে না । তাই , কয়েকদিন ঘর থেকে কম বার হন ।
আচ্ছা , হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে কি করোনা মারা যায় ?
অনেকেই হয়ত জানেন না , হ্যান্ড ওয়াশ আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার আলাদা জিনিস । হ্যান্ড ওয়াশ হাতে লাগানোর পর জল দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হয় - এটা বেশী ভালো ব্যাপার । কিন্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করা হয় যখন হাত ধোয়ার কোনো পরিস্থিতি থাকে না । ক্রিমের মত করে স্যানিটাইজার সারা হাতে মেখে নিতে হয় ।
তবে , হাতে ভালো করে স্যানিটাইজার লাগিয়ে নিলেই কি হাত করোনা মুক্ত হয় ?
livescience.com -এর মতে যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মধ্যে 62-71% ethanol ( অ্যালকোহল) আছে এবং সাথে 0.5% hydrogen peroxide বা 0.1% sodium hypochlorite (bleach) আছে শুধু সেটাই পারে করোনা ধ্বংস করতে । কিন্তু , স্যানিটাইজার লাগানোর সাথে সাথেই করোনা ধ্বংস হয় না , হাতে স্যানিটাইজার ভালোকরে লাগানোর পরে কোরোনা ধ্বংস হতে মিনিমাম ১ মিনিট সময় লাগবে । তাই একটু অপেক্ষা করুন বন্ধু । ( ধুতে থাকো ধুতে থাকো )
সত্যিই কি এটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে ?
এই পোস্টটি লেখার সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট ২০৯৮৩৯ জন মানুষ কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মধ্যে মোত ৮৭৭৮ জন মানুষ মারা গেছেন । কাজেই ভয়ে মুষড়ে পড়ার প্রয়োজন নেই । ধরবে আর মারবে এমন ক্ষমতা কোরোনার নেই । তবে আপনাকে থাকতে হবে সাবধানে ।
যেহেতু , কারোর শরীরে ঢুকতে না পারলে কোরোনা প্লাস্টিকের গায়ে ৭২ ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে তাই যদি মাত্র ৭২ ঘণ্টার জন্য সমস্ত পাবলিক গ্যাদারিং বন্ধ করা হয় তাহলে কোরোনার ম্যাক্সিমাম প্রভাবকে নস্ট করা সম্ভব ।
সবাইকে ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখতে বলছে কেন ?
রাস্তা ঘাটে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে তার থেকে অন্তত ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে , কারন কোরোনা ভাইরাসের তো আর ডানা নেই যে সে উড়ে উড়ে আপনার নাকে এসে বসবে , একমাত্র সামনের লোকের শ্লেষ্মা বা থুথু আপনার নাকে মুখে লাগলে তবেই কোরোনা আপনার দেহে ঢুকতে পারবে । আর বিজ্ঞানীরা মেপে দেখেছেন একজন লোক হেঁচে তার শ্লেষ্মা তিন ফুটের বেশী দুরত্বে পাঠাতে গেলে রীতিমত রকেট লঞ্চারের মত নাক প্রয়োজন । তাই মোটামুটি ৩ ফুট দুরত্বে থাকাই ভালো ।
আচ্ছা কোরোনা থেকে বাঁচার কোনো শর্টকাট উপায় আছে ?
অবশ্যই আছে -পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন , বাড়িতে থাকুন ।
টিভিতে তো দেখছেন - কোরোনা থেকে বাঁচার জন্য কেউ গোমূত্র খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তো কেউ বিভিন্ন বাবা'র দারস্থ হয়ে টাকায় আগুন ধরাচ্ছেন । কোরোনা থেকে বাঁচার জন্য নদিয়ার কাঠালিয়া ও করিমপুর অঞ্চলের মানুষজন দৈনিক সন্ধ্যেবেলা বাড়ির সবার নামে একটি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে বারান্দায় রেখে আসছেন - এমন খবরও পাওয়া গেছে । অনেক টোটকা বেরিয়ে পড়েছে , আরো বেরোবে । দয়া করে এগুলোতে জড়াবেন না । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া গাইডলাইন মেনে চলুন । এখানে ক্লিক করে পুরোটা জানতে পারবেন ।
মুরগীর মাংস খেলেই কি কোরোনা ধরবে ?
আজ্ঞে না । অবশ্য কে জানে আপনি রেঁধে খাবেন না কাঁচা খাবেন তাই জোর দিয়ে কেউ বলতেও পারবে না । তবে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত বলেন, “ভারত সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি মুরগির মাংস, ডিম, এগুলির থেকে COVID-19-র সংক্রমণের ঝুঁকি। কাজেই কোনও কারণ নেই এই নিয়ে অকারণে বিতর্ক তৈরি করা বা ভয় পাওয়ার। "
আর একটা ব্যাপার আপনি নিজেই ভেবে দেখুন -অন্যান্য ভাইরাসের মতোই কোরোনা ভাইরাসও বেশী তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না , তাহলে মুরগীর দেহে কোরোনা থাকলেও সেটা রান্না করে খেলে সেই ভাইরাস কি আর বেঁচে থাকবে ? মশাই আমরা তো আর চীনে পাবলিক নই , খাওয়ার ব্যাপারে বাঙালী অত কাঁচা নয় । মনে রাখবেন , সুসিদ্ধ কোনো খাবারেই কোরোনা থাকতে পারে না ।
আচ্ছা , কোনোভাবে আমি করোনা আক্রান্ত হলে কিভাবে বুঝব ?
রোগের লক্ষ্মণ দেখবেন । শ্বাসকষ্ট ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ।এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই উপসর্গ দেখা দেয়, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় নেয়।
এক কাজ করুন , শ্বাস নিয়ে দম বন্ধ করে কিছুক্ষন বসে থাকুন - ঘড়ি দেখুন - কতক্ষন পারছেন থাকতে ? ১০ সেকেন্ড এর আগেই দম ছেড়ে দিলে বারবার করে দেখুন ।মিনিমাম ১০-১৫ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে না পারলে বুঝতে হবে স্বাশকস্ট দেখা দিচ্ছে । অন্যান্য উপসর্গ গুলো থাকলে একবার চেকাপ করিয়ে নিন ।
আচ্ছা , করোনা ভাইরাসের নাকি ওষুধ আবিস্কার হয়ে গেছে ?
দেখুন আজ ২১শে মার্চ পর্যন্ত এমন কোনো খবর জানা যায়নি । অবশ্য আমরা ভারতীয়রা ও বাংলাদেশের মানুষেরা নিজেরাই অনেক ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছে, তাড়াতাড়ি আমরা নোবেলও পেয়ে যেতে পারি । তবে যে কোরোনা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ওষুধ খান না কেন , খাওয়ার আগে একবার কোরোনা রোগের ভাইরাস SARS-CoV-2 এর ফুল ফর্মটা জিজ্ঞেস করে নেবেন ।
ভয় পাবেন না । ভয় ছড়াবেন না । পরিস্কার থাকুন । নিয়ম মেনে চলুন । লেখাটা শেয়ার করুন ।
SARS-CoV-2 : severe acute respiratory syndrome coronavirus 2
কোরোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার সহজ উপায় - পড়ুন ও শেয়ার করুন
Reviewed by Wisdom Apps
on
March 21, 2020
Rating:
No comments: