প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেকার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী বন্দরনগরী চন্দ্রকেতুগড় । উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপা জনপদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই পর্যটনকেন্দ্র । কিংবদন্তি , বিশ্রুত রাজা চন্দ্রকেতুর নামানুসারে মৃৎ-দুর্গপ্রকার পরিবেষ্টিত ক্ষেত্রটির নাম হয় চন্দ্রকেতুগড় । বেড়াচাঁপা থেকে থেকে দু'কিমি দূরে ১৯৫৫ সালে আবিষ্কৃত হয়েছে মহেঞ্জোদারোর সমসাময়িক এক বন্দরনগরী , রাজা চন্দ্রকেতুর গড় । কালিন্দী নদীর তীরে ব্যাবসা বানিজ্যের অন্যতম পীঠস্থান ছিল এই চন্দ্রকেতুগড় । এখানকার ঢিপির নীচে খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের প্রাগমৌর্য যুগ থেকে দ্বাদশ শতকের পালযুগ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন জনবসতির নিদর্শন মিলেছে । পাওয়া গেছে অঙ্ক চিহ্নিত রজতমুদ্রা , ঢালাই তাম্রমুদ্রা , কুষান ও গুপ্তযুগের সিলমোহর এবং মৌর্য , শুঙ্গ , কুষাণ ও গুপ্ত যুগের পোড়ামাটির ফলক ও মূর্তি , নানা প্রকার পুঁতি , অস্থিনির্মিত কলাবস্তু সহ অসংখ্য প্রত্নবস্তু । ১৯০৯ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে এসেছিলেন প্রত্নতত্বের সন্ধানে ।
চন্দ্রকেতুগড়ের প্রাচীন পুরাকীর্তির আর বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই । কাঁটা বেড়া দিয়ে ঘেরা উঁচু ঢিপিই গড়ের সাক্ষ্য বহন করছে । আকাশে হাত বাড়ানো গাছগুলোর ছায়ায় চড়ুইভাতির রমরমা ছিল , বর্তমানে বনভোজন নিষিদ্ধ । বেড়াচাঁপায় দেবালয়ে ১৯৫৬ সালে মাটি খুঁড়ে বহুকোন বিশিষ্ট একটি উত্তরমুখী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে । প্রাথমিক ভাবে মন্দিরটিকে গুপ্তযুগের বলে অনুমান করা হলেও বাস্তবিক পক্ষে নকশা , স্থাপত্যবিন্যাস ও অলংকরণের নিরিখে এটি পাল যুগের দেবালয় বলেই মনে হয় । এটি ক্ষনা-মিহিরের ঢিপি বা বরাহমিহিরের ঢিপি নামে পরিচিত । বেড়াচাঁপা বাস স্ট্যান্ডের লাগোয়া দিলীপ কুমার মিত্রের সংগ্রহশালায় প্রতি শনিবার ও রবিবার সকাল, বিকেলে দেখে নেওয়া যায় চন্দ্রকেতুগড়ের প্রাচীন নিদর্শন । তামা ও রূপার মুদ্রা , সিল মোহর , পাথরের রাশিচক্র , নকশাকাঁটা ইট , ব্রোঞ্জের নারীমূর্তি , টেরাকোটায় নানান ভঙ্গিমায় গনেশ সহ নানান দেবদেবী , মিথুন মূর্তি , যক্ষিণী মূর্তি , নিত্য ব্যাবহার করার টুকিটাকি , মাটির পাত্র সহ নানান সুক্ষ্ম অমূল্য প্রত্নবস্তু সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। হাড়োয়ার আব্দুল জব্বরের ব্যক্তিগত সংগ্রহেও বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন সযত্নে রক্ষিত আছে ।
কীভাবে যাবেন ঃ বারাসাত বা বসিরহাট থেকে দেবালয় বেড়াচাঁপা । ট্রেনে গেলে বারাসাত বা বসিরহাট নেমে বাস ধরতে হবে । ক্ষনামিহিরের ঢিপি এবং দিলিপ কুমার মৈতের সংগ্রহশালা বেড়াচাঁপাতেই । চন্দ্রকেতুগড় যেতে হলে হাড়োয়া মুখী রাস্তায় ১ কিমি গিয়ে বাঁয়ে ইট বিছানো রাস্তা ধরে আরও ১ কিমি যেতে হবে । নিকটবর্তী রেলস্টেশন হাড়োয়া । শ্যামবাজার থেকে ৭৯ , ৭৯এ , ৭৯সি বাস , ধর্মতলা থেকে ২৪৮ রুটের লাক্সারী বাস , সরকারী বাসও যায় বেড়াচাঁপায় ।
চন্দ্রকেতুগড় গেছেন কখনো ? উত্তর ২৪ পরগনার এই ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরে আসুন
Reviewed by Wisdom Apps
on
March 05, 2019
Rating:
No comments: