কম বয়সে হৃদরোগ -
১৯৮৫ সন থেকে ২০১৭ সন এর মধ্যে হৃদরোগে প্রাণহানির হার বেড়েছে পুরুষদের মধ্যে ১০৩ শতাংশ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ। গত ৩০ বছরে হৃদরোগের হার আমেরিকা ও ইউরোপে হ্রাসমূখী কিন্তু আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান। ভারতীয়দের হৃদরোগের সম্ভাবনা আমেরিকানদের থেকে ৩-৪ গুন বেশি, চিনদেশীদের থেকে ৬ গুন বেশি এবং জাপানিদের থেকে ২০গুন বেশি। ১৯৬০ সালে ১ শতাংশ থেকে গত শতাব্দীর শেষ দিকে হৃদরোগের ব্যাপকতা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ। আশঙ্কার বিষয় হলো, সমগ্র বিশ্বে ১৫ থেকে ৬০ বছর অবধি, বৃহত্তম জনসংখ্যা যে অসুখে আক্রান্ত সেগুলো হলো হৃদরোগ ও স্ট্রোক।
• প্রাণহানির হার
হৃদরোগ জনিত কারণে- ২৯.৩ শতাংশ
সংক্রমণ জনিত কারণে- ২৩.৪ শতাংশ
ক্যান্সার জনিত কারণে- ১২.৪৯ শতাংশ
স্ট্রোক জনিত কারণে - ৯.৬৬ শতাংশ
ফুসফুসের প্রদাহজনিত কারণে - ৬.৯৫ শতাংশ
• হৃদরোগের কবলে অল্পবয়সীরা - সবথেকে উদ্বেগের কথা তুলনামূলক ভাবে অল্পবয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এই সংখ্যা প্রায় ১২-১৬ শতাংশ। হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর ৫২ শতাংশ ঘটে ৫০ বছরের নিচের রোগীদের এবং সমস্ত হার্ট-অ্যাটাকের ২৫ শতাংশ ঘটে ৪০ বছরের নিচের রোগীদের। আমাদের এবং সন্নিহিত দেশগুলিতে হটাৎ হার্টঅ্যাটাকের গড় বয়স ৫৩ যা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে ৬৩।
• কোথায় দাঁড়িয়ে মহিলারা- প্রচলিত ধারণা, হৃদরোগজনিত অসুখ মেয়েদের মধ্যে কম হয়। এই বদ্ধমূল ধারণার বদল দরকার।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হার্ট-অ্যাটাকের বয়স একটু বেশি কিন্তু হার্টঅ্যাটাকের প্রথম ১মাসে প্রাণহানির হারও বেশি।
• ঝুঁকি গুনক- সারা বিশ্বে হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিপূর্ন গুনক গুলি হলো - বয়স, বেশি কোলেস্টেরল ও কম কোলেস্টেরল, ধূমপান, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন। এই ঝুকিগুলির সঙ্গে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে আরও কিছু সমস্যা:
১) এক ধরণের বিশেষ কোলেস্টেরল: আ্যপো বি/অ্যাপো এ১
২) পেটে মেদ জমা
৩) অতিরিক্ত খারাপ ট্রাইগ্লিসারাইড ও কম ভালো কোলেস্টেরল।
৪) ডায়াবেটিস, প্রাক ডায়াবেটিস ও ইনুসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
৫) শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
৬) নগরায়ন
৭) জেনেটিক মিউটেশন
• কি করা উচিত: হৃদরোগ আমাদের দেশে এখন মহামারীর রূপ নিয়েছে। পরিকল্পনার জন্য সময় নষ্ট করার বিলাসিতা দেখানোর সময় নেই। সরকার, চিকিৎসা সংগঠন, বেসরকারি সংগঠনের মধ্যে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো নিয়ে অপৎকালীন কাজ শুরু করা উচিত:
ক) ঝুঁকি গুনকগুলো খুঁজে বার করা এবং তাদের প্রতিকারের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বিন্যস্ত করা।
খ) সারা দেশ জুড়ে সাধারণ সচেতনতা ও সুসচেতনতা গড়ে তোলা।
গ)অস্বাস্থ্যকর নগরায়ন প্রতিরোধ করা।
ঘ) মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট সুলভ করা।
• ব্যক্তিগত উদ্যোগে: রাষ্ট্রের বা সংগঠনের ভরসা রেখে বা অব্যবস্থার দোহায় দিয়ে বসে থাকারও সময় নেই। নিজে জানুন ও পরিবারের বা আশেপাশের সবাইকে জানান। নিজের ঝুঁকি গুনকগুলো জানুন ও তার প্রতিকার শুরু করুন।
১) কমবয়সীরা প্রথমেই ধূমপান ও অ্যালকোহল বন্ধ করুন। অতীব খারাপ নেশগুলোর প্রতি আশা বেড়েই চলেছে যুব সমাজের। বহুজাতিক সংস্থাগুলিতে দিনভর খেটে চলা ছেলেমেয়েরা দিনভর অসংখ্য সিগারেটে টান দিচ্ছেন। মুখে পুড়ছেন গুঠখা। দিনের শেষে কাজের ক্লান্তি তাড়াতে বেছে নিচ্ছেন অ্যালকোহল। এভাবে তাদের হৃদযন্ত্রে জমা হচ্ছে বিষ।
২) কমবয়সী ছেলেমেয়েরা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকার দোহায় দিয়ে প্রত্যেকদিন হোটেলে পরোটা, রেডমিট, চাউমিন খেয়ে চলেছেন। এভাবে দ্রুত হার্টের আর্টারিতে জমা হচ্ছে কোলেস্টেরল।
৩) রান্নায় কম তেল ব্যবহার করুন। সাধারণ ভাবে মাথাপিছু প্রতিদিন ৩ চা চামচ।
৪) অন্তত সপ্তাহে ৫ দিন, ৪০ মিনিট দ্রুতপদে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন।
৫) চর্বি জাতীয় মাংস, ডিমের কুসুম কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৬) চল্লিশ পেরোলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্তচাপ মাপান।
৭) ৩৫ এর পর নিয়মিত ব্ল্যাড সুগার পরীক্ষা করান।
৮) শরীরের ওজন সঠিক রাখার চেষ্টা করুন। আপনার বডি মাস ইনডেক্স ২৫ কেজি/স্কোয়ার মিটারের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।
৯) কোমরের মাপ ১০২ সেমি(পুরুষ) এবং ৮৮ সেমি(মহিলা) এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন।
কম বয়সে হৃদরোগ ?? কম বয়সে হার্ট আট্যাক কেন হয় ? জেনে নিন প্রতিকারের উপায়
Reviewed by Wisdom Apps
on
August 27, 2018
Rating:
No comments: