বিভিন্ন সবজীর ডাটা ও ফেলা দেওয়া হয় এমন শক্ত অংশ দিয়েও বেশ সুস্বাদু রান্না করা যায় । এই সমস্ত রান্নায় যেমন পুষ্টিগুনের কোনো অভাব থাকে না তেমনই এগুলো করাও খুব সহজ । নীচে এমন ১০ টি রেসিপি শেয়ার করলাম -
1. সর্ষেবাটা দিয়ে ফুলকপির ডাঁটার চচ্চড়ি
উপকরণ : থেঁতো করে সেদ্ধ করা ফুলকপির ডাঁটা ২ কাপ, সর্ষে বাটা ১ টেবিল চামচ, লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচা লঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, পাঁচফোড়ন ১/৪ চা চামচ, সর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
সর্ষের তেল গরম করে পাঁচ ফোড়ন দিতে হবে। পাঁচফোড়ন ভাজার সুগন্ধ বেরোলে কপির ডাঁটা নুন, হলুদ ও লঙ্কার গুঁড়ো দিতে হবে ও একটু ভেজে নিতে হবে।সর্ষে ও কাঁচা লঙ্কা বাটা জলে গুলে ঢেলে দিতে হবে ও ঢেকে রাখতে হবে। সমস্তটা মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিতে হবে।
2. ফুলকপির গোড়ার ডালনা
উপকরণ : ফুলকপির গোড়া ৩টি, মাঝারি সাইজের আলু ২টি, ধোনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরেগুঁড়ো ১ চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, তেজপাতা ২ টি, গরমমশলার গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, আস্ত জিরে ১/৪ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, কুচোনো টোম্যাটো ১টি, চিনি ১ চা চামচ, লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, সর্ষে/রেপসিড তেল ৩ টেবিল চামচ, ভেজিটেবল ঘি ১ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
ফুলকপির গোড়ার শক্ত ধার ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে সেদ্ধ করে নিতে হবে। আলুর খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে নিতে হবে। এবারে তেল গরম করে আলু ভেজে তুলে রাখতে হবে। ফুলকপির গোড়ার টুকরো ভেজে তুলে রাখতে হবে। ওই তেলে আস্ত জিরে ফোড়ন দিয়ে আদা বাটা, টোম্যাটো, জিরে ও ধনে গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, নুন, হলুদ ও চিনি দিয়ে কষতে হবে। কষা হয়ে গেলে জল দিতে হবে এবং আলু ও ফুলকপির গোড়ার টুকরো দিতে হবে। সব কিছু সেদ্ধ হলে ও ঝোল গা-মাখা হলে নামিয়ে নিতে হবে। এক টেবিল চামচ ভেজিটেবল ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা ভেজে নিতে হবে। নামিয়ে গরম মশলার গুঁড়ো দিতে হবে। ডালনার মধ্যে ওই তেজপাতা এবং গরম মশলা ঢেলে দিতে হবে।
3. ফুলকপির গোড়ার তরকারি
উপকরণ : তিনটি ফুলকপির গোড়া, বড় সাইজের পেঁয়াজ ২টি, রসুন ৬ কোয়া, কুচোনো টোম্যাটো ২টি, ফেটানো টক দই ৪ টেবিল চামচ, আদা ১ টুকরো, গরম মশলার গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরে গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, লঙ্কার গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, কুচোনো ধনে পাতা ১ টেবিল চামচ, তেল সর্ষে/রেপসিড ২ টেবিল চামচ। চিনি ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
ফুলকপির গোড়ার শক্ত ছাল কেটে বাদ দিয়ে মাঝখানের নরম অংশ ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে ও সেদ্ধ করে নিতে হবে। পেঁয়াজ রসুন ও আদা বেটে নিতে হবে। দু টেবিল চামচ তেল গরম করে বাটা মশলা কষে নিতে হবে। ফুলকপির গোড়ার টুকরো অন্যান্য উপকরণ ও টোম্যাটো দিতে হবে। কষা হয়ে গেলে অল্প জল দিতে হবে। জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিয়ে ফেটানো টক দই, ধনেপাতা ও গরম মশলার গুঁড়ো মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
4. ফুলকপির পাতা দিয়ে আলুর তরকারি
উপকরণ : কুচোনো ফুলকপির পাতা (শিরা বাদ দিয়ে) ৩ কাপ, খোসা ছাড়ানো ও টুকরো করে কাটা মাঝারি সাইজের আলু ২টি, আস্ত সর্ষে ১/২ চা চামচ, হিং এক চিমটি, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, কুচোনো কাঁচা লঙ্কা ২টি, মিহি করে কুচোনো আদা ২ চা চামচ, লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ, সর্ষে/রেপসিড তেল ও টেবিল চামচ। জিরে ভাজা গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
আলু তেলে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তেলে সর্ষে ও হিং ফোড়ন দিয়ে কুচোনো শাক ও সমস্ত উপকরণ দিয়ে (জিরে ভাজা বাদে) ঢাকা দিতে হবে-জল দিতে হবে না। পাতা নরম হলে সমস্তটা চটকে নিতে হবে। এবারে শাকের মধ্যে আলু ও একটু জলের ছিটে দিয়ে আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে। আলু সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হবে। ওপর থেকে জিরে ভাজা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে হবে।
5. মটরশুটির খোসার তরকারি
উপকরণ : মটরশুটির টাটকা কচি খোসা ২৫০ গ্রাম, আস্ত জিরে ১/২ চা চামচ, কুচোনো ধনে পাতা ১/২ টেবিল চামচ, কুচোনো টোম্যাটো ১টি, লঙ্কার গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, মিহি করে কুচোনো আদা ১ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, সর্ষে/রেপসিড তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
মটরশুটির খোসার ভেতর দিকে অংশটা একটু ভাঁজ করে মুড়ে সাদা ছালের অংশটা বাদ দিয়ে দিতে হবে-এইভাবে মটরশুটির খোসার নরম অংশটুকু ছাড়িয়ে নিতে হবে। দু টেবিল চামচ তেল গরম করে জিরে ফোড়ন দিতে হবে। টোম্যাটো, আদা, নুন, হলুদ ও লঙ্কার গুঁড়ো দিতে হবে। টোম্যাটো নরম হলে মটরশুটির খোসা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খোসা নরম হলে নামিয়ে নিয়ে ধনে পাতা ছড়িয়ে দিতে হবে এবং গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
6. ঝিঙের খোসার তরকারি
উপকরণ : মিহি করে কোটা ঝিঙের খোসা ২ কাপ, মিহি করে কুচোনো পেঁয়াজ ২টি, মিহি করে কুচোনো টোম্যাটো ১টি, মিহি করে কুচোনো কাঁচা লঙ্কা ২টি, মিহি করে কুচোনো আদা ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, রেপসিড/সর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী : তেল গরম করে পেঁয়াজ আদা ও লঙ্কা ভেজে নিতে হবে। সমস্ত উপকরণ দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে-জল দিতে হবে না। ঝিঙের খোসা নরম হলে নামিয়ে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
7. ওলকপির পাতার সম্বর ডাল
উপকরণ : অড়হর ডাল ১ কাপ, কুচোনো ওলকপির পাতা ২ কাপ, নারকোল সিকিখানা, শুকনো লঙ্কা ৪টি, মেথি ১/৪ চা চামচ, মিহি করে কুচোনো ছোট সাইজের পেঁয়াজ ১টি, মার্বেল সাইজের পাকা তেঁতুল, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, রেপসিড তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
লঙ্কা ও মেথি অল্প তেলে ভেজে নিতে হবে। লঙ্কা মেথি ও নারকোল একসঙ্গে পিষে নিতে হবে।
ওলকপির কুচোনো পাতা ভাপিয়ে নিতে হবে। অড়হর ডাল চার কাপ জলে দু ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তেঁতুল পাঁচ মিনিট জলে ভিজিয়ে রেখে কাই বার করে নিতে হবে।ভেজানো জলে ডাল প্রায় সেদ্ধ করে নিতে হবে। নুন, হলুদ, ওলকপির শাক, নারকোল, মশলাবাটা, তেঁতুলের কাই সব দিতে হবে। ডাল সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হবে। ৪ টেবিল চামচ তেলে পেঁয়াজ ভেজে ডালের ওপর ঢেলে দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
8. তরমুজের খোসার ডালনা
উপকরণ : তরমুজের খোসার সবুজ ছাল ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কুটে নেওয়া সাদা অংশ ১ কাপ, আলু ২টি, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, চিনি ১ চা চামচ, কুচোনো টোম্যাটো ১টি, আস্ত জিরে ১/৪ চা চামচ, তেজ পাতা ২টি, গরম মশলা ১/২ চা চামচ, সর্ষে/রেপসিড তেল ২ টেবিল চামচ, ভেজিটেবল, ঘি ১ টেবিল চামচ, আধকাপ সেদ্ধ করা ছোলা।
প্রস্তুত প্রণালী :
আলু ডুমো ডুমো করে কেটে তেলে ভেজে নিতে হবে। তেলে জিরে, ফোড়ন দিয়ে ধনে, জিরে গুঁড়ো, নুন, হলুদ, লঙ্কার গুঁড়ো, টোম্যাটো ও আদা বাটা দিয়ে কষতে হবে। জল ও আলু দিতে হবে। জল ফুটতে থাকলে ডুমো ডুমো করে কাটা তরমুজের খোলা দিতে হবে ও চিনি দিতে হবে। সব সেদ্ধ হলে ছোলা দিতে হবে ও ঝোল গা-মাখা হলে নামিয়ে নিতে হবে। ঘি গরম করে তেজপাতা ভেজে নিতে হবে। ঘি নামিয়ে নিয়ে গরম মশলার গুঁড়ো দিতে হবে। ডালনায় ঢেলে দিতে হবে।
9. পোস্তবাটা দিয়ে লাল শাকের ডাঁটার চচ্চড়ি
অনেক সময় লাল শাকের ভাজা খেয়ে ডাঁটাগুলো ফেলে দেওয়া হয়। টাটকা লাল শাকের ডাঁটা ফেলে না দিয়ে পোস্তবাটা দিয়ে চচ্চড়ি রাঁধলে খেতে ভালই লাগবে।
উপকরণ : লাল শাকের ডাঁটা ২ আঁটি, পোস্ত বাটা ১/২ কাপ, পাঁচ ফোড়ন ১/৪ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ২টি, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, চিনি ১/২ চা চামচ, সর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
লাল শাকের ডাঁটা ১ ইঞ্চি লম্বা লম্বা করে কেটে নিতে হবে। তেলে পাঁচফোড়ন ও শুকনো লঙ্কা ভেঙে দিতে হবে। ডাঁটার টুকরো নুন ও হলুদ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ডাঁটার টুকরোর জল শুকিয়ে গেলে জলে পোস্তবাটা গুলে ঢেলে দিতে হবে। চিনি দিতে হবে। ডাঁটা সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হবে। শুকনো ভাতে মেখে খেতে চমৎকার।
10. পালং শাকের গোড়া ও কুমড়োর খোসা চচ্চড়ি
উপকরণ : শেকড়সুদ্ধ পালং শাকের গোড়া ১০/১২ টি, পাকা কুমড়োর খোসা ১ কাপ, আলু ২টি লম্বা লম্বা করে কোটা বেগুন ১ কাপ, কচি মুলো ১টি, কলাইয়ের ডালে বড়ি ৪টি, পাঁচফোড়ন ১/৪ চা চামচ, নুন ও হলুদ আন্দাজ মতো, শুকনো লঙ্কা ১টি, লঙ্কার গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, চেরা কাঁচা লঙ্কা ২টি, চিনি ১/২ চা চামচ, সর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ, সর্ষে বাটা ১ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী :
পালং শাকের গোড়ার ছাল ছাড়িয়ে একটু চিরে নিতে হবে। কুমড়োর খোসা চৌকো চৌকো করে কেটে নিতে হবে। খোসাসুদ্ধ আলু ও মুলো লম্বা লম্বা করে কেটে নিতে হবে। তেলে বড়ি ভেজে ভেঙে রাখতে হবে। ওই তেলে পাঁচফোড়ন দিতে হবে এবং শুকনো লঙ্কা ভেঙে দিতে হবে। শাক ও সমস্ত তরকারি এবং নুন ও হলুদ দিতে হবে। চচ্চড়ি ঢেকে রাখতে হবে।ঢাকনা খুলে দেখতে হবে তরকারি সেদ্ধ হল কিনা। সেদ্ধ না হলে অল্প জল দিতে হবে। চিনি, লঙ্কার গুঁড়ো, সর্ষেবাটা ও বড়ি দিতে হবে। তরকারি নরম হলে চেরা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এক চামচ সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিলে স্বাদ আরও বাড়বে।
সবজীর ডাটা ও গোড়া ফেলে না দিয়ে এই ১০ টি রেসিপি শিখে রান্না করুন
Reviewed by Wisdom Apps
on
September 01, 2018
Rating:
No comments: