বাচ্চাদের অসুখবিসুখে আমলকী
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক আমলকী: আমলকীতে উপস্থিত পুষ্টিগুলি যেমন- ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, ফাইবার, আয়রন প্রভৃতি বাচ্চাদের শরীরের পুষ্টি জোগায় ও শরীর মজবুত করে। একইসঙ্গে এগুলো ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ও জীবাণুনাশে সক্ষম।
বাচ্চাদের সর্দিকাশি বা ঠান্ডালাগা সারাতে আমলকীর ভূমিকা: সব বয়সের বাচ্চাদের কফ, কাশি, সর্দি বা ঠান্ডা লাগা একটি সাধারণ অসুখ। সেক্ষেত্রে আমলকী হলো অব্যর্থ ওষুধ। প্রতিদিন ১২৫-১৫০ মিগ্রা আমলকী চূর্ণ বা ৫-১০ ফোঁটা আমলকীর রস মধু সহযোগে দিনে দুবার সেবন করালে, এই ধরণের অসুখগুলি থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা যায়।
প্রণালী: ০-১ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৫-১০ ফোঁটা আমলকীচূর্ণ সরস মধু সহ বা ১২৫-২৫০ মিগ্রা আমলকীচূর্ণের সাথে মধু মিশিয়ে দিতে হবে। ১-২ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ হবে ১০-১৫ ফোঁটা বা ২৫০-৫০০ মিগ্রা। ২-৫ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাফ চামচ থেকে এক চামচ বা ৭৫০ মিগ্রা থেকে ১ গ্রাম। ৫-৭ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক থেকে দু চামচ আমলকী সরস মধু সহ অথবা চূর্ণের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম মধু সহ।
৭-১৫ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক থেকে দুচামচ আমলকী সরস মধু সহ অথবা ২-৩ গ্রাম আমলকী চূর্ণের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিতে হবে।
বাচ্চাদের অ্যালার্জিতে আমলকীর ভূমিকা:
অ্যালার্জি হলো কম প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রকাশ ও শরীরের কোষগুলোর অতি অসহিষ্ণুতা। এক্ষেত্রে আমলকী হলো একটি প্রতিরোধ ও নিরাময়কারী ওষুধ।প্রতিদিন দুবার আমলকী চূর্ণ ও আমলকী বীজের শাস চূর্ণ ২৫০-৫০০ মিগ্রা মধুসহ বাচ্চাদের খাওয়ালে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া আমলকী ফোটানো জল দিয়ে বাচ্চাদের স্নান করালে গায়ের চুলকানি হ্রাস পায়, চুল ঘন কালো ও ত্বক চিকন হয়।
বাচ্চাদের চিকেন পক্সে আমলকীর গুরুত্ব:
বাচ্চাদের চিকেন পক্স প্রতিরোধ ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে আমলকী ও মধুর গুরুত্ব অপরিসীম। বাচ্চাদের চিকেন পক্স এর প্রদাহ ও জ্বালা দূর করার জন্য আমলকী চূর্ণের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে দুবার আগের প্রণালী মেনে খাওয়াতে হবে। এছাড়া গায়ের চুলকানি কমাতে আমলকী বীজের শাস চূর্ণের সঙ্গে মধু সহযোগে দিতে হবে।
বাচ্চাদের ডায়েরিয়া ও বমিতে আমলকীর গুরুত্ব:
বাচ্চাদের ডায়েরিয়া ও বমি হলো অতি সাধারণ একটি অসুখ। সেক্ষেত্রে আমলকী হলো বমিনাশক ও ডায়রিয়ার ওষুধ। সেক্ষেত্রে আমলকী বীজের শাস চূর্ণের সঙ্গে মধু সহযোগে ১২৫-২৫০ মিগ্রা দিনে দুবার চাটিয়ে খাওয়ালে অথবা আমলকী সরস জলের সঙ্গে মিছরি সহযোগে দিনে দুবার পূর্বে দেওয়া প্রণালী অনুযায়ী সেবন করালে, বাচ্চাদের ডায়েরিয়া ও বমির মতো অসুখগুলি দূরে থাকে।
বাচ্চাদের পেট ফাঁপা, হজমে অক্ষমতা ও অরুচিতে আমলকী: বাচ্চাদের পেট ফাঁপা ও হজমে অক্ষমতার ক্ষেত্রে আমলকীর সরস হজমি টনিক বা পাচক হিসাবে কাজ করে। প্রতিদিন রাতে ১ গ্রাম আমলকী চূর্ণ গরম জলের সঙ্গে সেবন করালে বায়ু অনুলোমন হয়, রেচনে সাহায্য করে। বাচ্চাদের পেট ফাঁপা কমায় ও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যতাও দূর হয়। এছাড়া বাচ্চাদের অরুচি দূর করতে রোদে শোকানো আমলকীর সঙ্গে সৈন্ধক লবন মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো হয়।
কনজাংটিভাইটিস প্রতিরোধে আমলকী: বাচ্চাদের কনজাংটিভাইটিস হলো একধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত চক্ষু রোগ। এই ধরণের সংক্রামক প্রতিরোধক হিসাবে আমলকীর গুরুত্ব অপরিসীম। আমলকী ফোটানো জল ঠান্ডা করে সেই জল ভালো করে ছেঁকে, প্রত্যহ দুবার বাচ্চাদের চোখ ধোঁয়ালে এই ধরণের চক্ষু সংক্রামক রোগ দূরে থাকে।
রক্তক্ষরণে আমলকী: বাচ্চাদের কেটে ছড়ে গেলে ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। আমলকী ফোটানো জল ঠান্ডা করে সেই জল দিয়ে ক্ষতস্থান ভালো করে ধুলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় ও ক্ষত শুকোয়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে আমলকী: আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমলকীকে মেধ্য রসায়ন বলা হয়, অর্থাৎ মেধা বা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। আমলকী সেদ্ধ করে তার ক্কথ ঘি সহযোগে সেবন করালে বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি ও মেধাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ইমিউনিটি ও বাড়ে।
এছাড়া যে বাচ্চা প্রতিদিন আমলকী মধুসহ বা আমলকী বীজের চূর্ণ মধু সহযোগে সেবন করে তাদের চোখ, কান, গলা, নাক ও মুখের ইনফেকশনও কম হয়।
আমলকীর অন্য উপকারিতা:
১) বাচ্চাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২) দাঁতের পক্ষে হিতকর।
৩) বাচ্চাদের গলার স্বর ভালো হয়।
৪) হার্ট শক্তিশালী করে, লিভার ভালো রাখে, রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে ও কিডনি সতেজ রাখে।
৫) মূত্রে জীবাণু সংক্রমণ কমায়।
৬) বয়ঃস্থাপক হিসাবে কাজ করে।
৭) এছাড়া আমলকীর রস শরীর মজবুত রাখে।
বাচ্চাদের অসুখবিসুখে আমলকী কার্যকারিতা
Reviewed by Wisdom Apps
on
September 03, 2018
Rating:
No comments: